নড়াইল জেলার সব সড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফসল শুকানো ও মাড়াই করা হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। যানবাহনগুলোর গন্তব্যে পৌঁছতেও দেরি হচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়ছেন চালকসহ যাত্রীরা। শুধু তাই নয়, গেল সপ্তাহে জেলার নড়াগাতী থানা এলাকার একটি সড়কে শুকাতে দেওয়া কলাই প্রাইভেট কারের চাকায় পেঁচিয়ে আগুন লেগে ওই প্রাইভেট কারটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবুও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
জানা গেছে, জেলায় সড়ক ও জনপথের ১৭০ কিলোমিটার এবং এলজিইডির ২ হাজার ২৯৫ কিলোমিটার পাকা ও কাঁচা সড়ক রয়েছে। প্রায় ১০ বছর ধরে জয়পুর-লাহুড়িয়া, লক্ষ্ণীপাশা-মহাজন, নড়াইল-কালিয়া, ভাটিয়াপাড়া-নড়াইল, নড়াইল-ফুলতলা, কালিয়া-চাপাইল, কুন্দশী-ইতনা, লোহাগড়া-সিডি বাজার, এড়েন্দা-লুটিয়া, ধোপাদহ-নলদী ভায়া মিঠাপুরসহ প্রত্যেকটি সড়কের ওপর বিভিন্ন মৌসুমি ফসল শুকানো এবং মাড়াই করা হচ্ছে। এসব সড়ক হয়ে উঠেছে উঠোন। আউস, আমন, বোরো, খেসাড়ি-মসুর ডাল, ধনিয়া, গমসহ বিভিন্ন ফসল এখন রাস্তার ওপরেই মাড়াই ও শুকানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে গাড়ির চালক, যাত্রী ও পথচারীরা জানান, 'সড়কে ফসল শুকানো এ জেলার কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে ফসল শুকাতে নিষেধ করলে, কৃষকরা সড়ক থেকে ফসল তো অপসারণ করে না, উল্টো গালমন্দ করে। দুর্ভোগ মেনে নিয়ে সড়কে চলতে হচ্ছে।'
লক্ষ্ণীপাশা-মহাজন সড়কের থ্রি হুইলার চালক মুসা মিয়া বলেন, 'সড়কগুলোর ওপর কৃষকরা সারা বছরই বিভিন্ন ফসল মাড়াই ও শুকিয়ে থাকে। ফলে গাড়ির চাকা ও মোটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশে ফসল জড়িয়ে চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, আবার যানবাহনের ক্ষতি হয়ে থাকে।'
উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের নারানদিয়া গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলাই মলিস্নক বলেন, এখন ফসল ওঠার মৌসুম। এ সময় গ্রামের মানুষজন বাড়ির অদূরে সড়কে ফসল শুকানো এবং মাড়াই করার জন্য সড়কগুলো ব্যবহার করে থাকে। এতে সাময়িক দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
একই উপজেলার লক্ষ্ণীপাশা ইউনিয়নের বাঁকা গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা জিরু কাজী বলেন, এ কাজে মানুষের ক্ষতি হয়। বৃষ্টির জন্য পাকা রাস্তার উপর ফসল শুকাতে সুবিধে হয়। তাই নিষেধ করলেও কেউ শোনে না। এ বিষয়ে আইন হওয়া উচিত।'
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি সৈয়দ খায়রুল আলম বলেন, 'রাস্তার ওপর ফসল শুকানো ও মাড়াইয়ের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এ জেলায় ৮ বছরে সড়কে ফসল শুকানোর কারণে একজনের মৃতু্য, কয়েকশ' মানুষ আহত এবং প্রায় ১০ জন পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইন করে সড়কে ফসল মাড়াই বন্ধ করা প্রয়োজন।'
এ ব্যাপারে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আফরিন জাহান বলেন, 'এ বিষয়টি জানা নেই। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। রাস্তায় যাতে কেউ কোনোপ্রকার ফসল শুকাতে না পারে, সেজন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে অবগত করা হবে এবং আইনশৃঙ্খলার সভায় বিষয়টি আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।'