পাহাড়ের আনারসে সমতলের চাহিদা পূরণ
অপরিপক্ব আনারস পাকাতে হরমোন ইথোফেন ব্যবহার
প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
পাহাড়ে প্রান্তিক চাষি রসালো আনারস চাষে সফল। তবে রাতারাতি ফল বাজারজাত ও অধিক মুনাফার আশায় গাছ ও ফলে মাত্রাতিরিক্তি হরমোন প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর ফলে আনারসে স্বাদ না পাওয়ার অভিযোগে বাজারে ক্রেতা কমছে! তবে চাষি ও কৃষিবিদদের দাবি পরিপক্ব ফল একসঙ্গে পাকাতে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় হরমোন ইথোফেন ব্যবহারে মোটেও স্বাস্থ্যঝুঁঁকি নেই!
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির আনারস সমতলের হাট দখলে রেখেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিলস্না, ফেনী শহরজুড়ে পাহাড়ের আনারসের কদর তোলায় তোলায়। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় অন্তত ৮২৭ একর টিলায় আনারসের চাষ হয়েছে এবার। পাহাড়ের উঁচু, নিচু টিলার পরতে পরতে আনারসের গাছ ও ফলে ঝলমল করছে বাগান!
চাষি ও কৃষিবিদদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সৃজিত বাগানে গাছ পরিপক্ব হওয়ার পর গাছে হরমোন প্রয়োগ করা হয়। এতে গাছে ফুল আসতে থাকে! ফুল ফলে পরিণত হওয়ার ৩ মাস পর ফলনে হরমোন ইথোফেন পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করার ৪৮ ঘণ্টায় ফল পেকে যায়! এতে চাষির সুবিধা বাজারে ফল নেওয়ামাত্র ক্রেতা হুমড়ি খেয়ে পড়ে! যদিও স্থানীয় পর্যায়ে ক্রেতারা এই হরমোন মিশানো ফল কেউই খায় না! কিন্তু সমতলে এর কদর এখনো তোলায় তোলায়!
\হমানিকছড়ি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ের রসালো ফল আনারস সমতলে চাহিদা বেশি। ফলে উপজেলার পোড়াটিলা, ধুরংখাল, চইক্যাবিল, ফকিরনালা, গবামারা, গচ্ছাবিল, ডেপুয়াপাড়া, কালাপানি, মলঙ্গীপাড়ার ৮২৭ একর টিলায় এবার আনারস চাষ করেছেন শতাধিক প্রান্তিক কৃষক। প্রতি একর জমিতে সৃজিত ৩৩ হাজার চারায় ফসল আসা পর্যন্ত ব্যয় ২ লাখ টাকা। ফলন ও বাজার দর ভালো হলে বিক্রি প্রায় ৩ লাখ টাকা। আর বাজার কম হলে আড়াই লাখ টাকা।
গচ্ছাবিলের চাষি কামাল হোসেন জানান, পাহাড়ের মানুষ আয়-রোজগারে মাটিকে আপন করে নিয়ে জুম চাষ হিসেবে আনারস সৃজন করেন। চৈত্রের দাবদাহে রোজাদার ইফতারে রসালো ফল আনারস পছন্দ বেশি। কিন্তু এবার ঢাকার বাজারে তরমুজ আসায় আনারসে যশ কমেছে! গাছে হরমোন প্রয়োগ বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব চাষি কৃষিবিদের ফরমুলা (পরামর্শ) মেনে নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমোন ইথোফেন স্প্রে করে সে ফলে স্বাদ নষ্ট হয় না। হরমোন ব্যবহারে হেরফের হলে ফলের স্বাদ নষ্ট হয়!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক পাইকার বলেন, 'প্রতিটি গাছে ফলন পর্যন্ত খরচ দাঁড়ায় গড়ে ৯-১০ টাকা। ক্ষেতে আনারস পাইকারি ক্রয় করি ১২-১৩ টাকা। গাড়িভাড়া, টোল, ইজারা ও অন্য খাতে ব্যয় আরও ৪ টাকা। বাজার ভালো হলে সমতলে বিক্রি হয় গড়ে ২০-২২ টাকা। কিন্তু এবার রসালো ফল তরমুজ বাজার দখল করায় আনারসে লোকসান গুনছি! খরচের পয়সাও ওঠে না! এছাড়া পচনশীল ফল গড়ে নষ্ট হয় ১৫-২০%। সব মিলিয়ে এবার আনারসে লোকসান।'
বুধবার বিকালে উপজেলার পশ্চিম গচ্ছাবিল একটি আনারস বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, ৩ একর পরিমাণ টিলার আনারস বাগানের ফল পরিপক্ব হয়ে উঠেছে। একাধিক শ্রমিক পরিচয় গোপন করে বলেন, আজ হরমোন ইথোফেন স্প্র্রে করলে কালই ওই খেতের আনারস কাটা যাবে। বাজারমূল্যের পরিস্থিতি দেখে গাছে ওষুধ (হরমোন) স্প্রে করা হবে!
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দীন আহমেদ বলেন, পাহাড়ের মাটি খুবই উর্বর! বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদকৃত গাছে হরমোন ইথোফেন ব্যবহারে বারোমাস আনারস ফলানো সম্ভব। উপজেলার ৮২৭ একর আনারস খেতে ফল পাকা শুরু হয়েছে। নিয়ম মেনে গাছ ও ফলে হরমোন ইথোফেন ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁঁকি নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে ফলের স্বাদ নষ্ট হয় এবং স্বাস্থ্য ঝুঁঁকি বাড়ে।'