এবার ঈদকে সামনে রেখে তেমন ব্যস্ততা নেই কিশোরগঞ্জের ভৈরবের জুতা শ্রমিকদের। কেমিক্যাল সংকটে ভৈরবে পাদুকা কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু কারখানার উৎপাদন। ঈদ উপলক্ষে যেখানে দিন রাত জুতা উৎপাদন করত শ্রমিকরা; সেখানে অলস সময় কাটাচ্ছে ভৈরবের পিও ফুটওয়্যার কারখানার মালিক-কর্মচারীরা। এদিকে যাদের মজুতকৃত কিছু কেমিক্যাল ও কাঁচামাল ছিল তারাই কিছুটা রমজান উপলক্ষে জুতা তৈরি করতে পারছে। এদিকে দেশের বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে বেচা কেনা আগের মতো নেই বলে দাবি জুতা ব্যবসায়ীদের। কেমিক্যালসহ জুতা তৈরির বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে গতবারের তুলনায় পাদুকা তৈরি ও আমদানি-রপ্তানি কমে অর্ধেকে নেমে গেছে। এ অবস্থায় ঈদে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস নিয়ে দুঃচিন্তায় মালিকরা।
\হভৈরবে ঈদ মৌসুমে যেখানে কোটি টাকার বাণিজ্য করার কথা, সেখানে কেমিক্যাল সংকটে অটোমেশিন নির্ভর কারখানার উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। যাদের মজুতকৃত কিছু কেমিক্যাল ও কাঁচামাল ছিল তারাই কিছুটা রমজান উপলক্ষে পাদুকা উৎপাদন করতে পারছে। বছরের আট থেকে নয় মাস কারখানাগুলোতে কাজের তেমন চাপ না থাকলেও দুই ঈদের আগে কাজের চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কারিগরদের কর্মযজ্ঞ। ঈদ মৌসুমে অটোমেশিন দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার জোড়া জুতা উৎপাদন হওয়ার কথা। অথচ এমন সময়েও অলস পড়ে আছে কারখানাগুলোর কার্যক্রম। মূলত কেমিক্যাল সংকটের কারণে ভৈরবে অটোমেশিন নিভর্র পাদুকা কারখানাগুলোতে এখন এমন হতাশার চিত্র।
ভৈরবে ৪২টির মতো পিও ফুটওয়্যার কারখানাসহ ছোট বড় ৩/৪ হাজার কারখানা রয়েছে। ভৈরব শহর জুড়ে বিভিন্ন কারখানায় নারী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ও পুরুষ শ্রমিক রয়েছে প্রায় ১ লাখের মতো। এ জুতাকে ঘিরে প্রত্যক্ষ ও পুরোক্ষভাবে ৩/৪ লাখ শ্রমিক এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ছয়টির মতো বৃহত্তর পাইকারি মার্কেট এবং ৫০টিরও বেশি পাদুকাশিল্প পলস্নী নিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে একটি বড় কর্ম ও অর্থনৈতিক বলয়। যেখানে প্রতিদিন প্রত্যেকটি কারখানায় অন্তত ২৫ লাখ জোড়া তৈরি হয়ে থাকে। কিন্তু গত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কেমিক্যাল সংকটে ধুঁকছে কারখানাগুলো। ইতোমধ্যে অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
শ্রমিকরা রতন মিয়া বলেন, 'সারা বছর কাজ করে আমরা যা আয় করি, এই তিন মাস কাজ করে তার দ্বিগুণ টাকা পাই। এবারের মৌসুমে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। কেমিক্যাল নাই, কাজও নাই।
অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত জুতার পাইকারি ব্যবসায়ী আবু জাফর জানান, 'এখানকার উৎপাদিত জুতা খুবই উন্নত মানের এবং দেশব্যাপী এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এ বছর জুতার দাম অনেক বেশি। '
এ বিষয়ে আরাম পিও ফুটওয়্যার মালিক আব্দুল আলিম বলেন, কেমিক্যাল সংকটে গত ২ সপ্তাহ বেশি সময় ধরে পাদুকা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা বলছেন দু'এক দিনের মধ্যে কেমিক্যাল পেয়ে যাবো। কিন্তু কখন পাবো নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। এদিকে অলস সময় কাটাচ্ছে আমার মেশিন শ্রমিকরা।
ভৈরব জুতাশিল্প কারখানা মালিক সমিতির সভাপতি আল আমিন মিয়া জানান, 'কেমিক্যালের অভাবে অধিকাংশ কারখানায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারাও বেকার রয়েছেন। কবে নাগাদ কেমিক্যালের সরবরাহ মিলবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। সংকট সমাধানে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।'