নদ-নদী তীরবর্তী মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে লঞ্চের আদলেই নির্মাণ করা হয়েছে ভাসমান হাসপাতাল। মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে খুশি নদীপাড়ের সাধারণ মানুষ।
২৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে হাজার হাজার মানুষকে সেবা প্রদান করছে তিনতলা বিশিষ্ট জীবনতরী লঞ্চটি। মাদারীপুর সদর উপজেলার কাজীরটেক পুরনো ফেরিঘাট এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে দেড় মাস ধরে নোঙর করে হতদরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ভাসমান হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, দেখলে মনে হতে পারে এটি একটি লঞ্চ যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু না। এটি একটি ভাসমান হাসপাতাল। যেখানে নূ্যনতম টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় নদ-নদী তীরবর্তী মানুষকে। এই হাসপাতালে প্রতিদিনই স্বাস্থ্যসেবা নিতে ভিড় করছেন শত শত মানুষ। ৫০ টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছেন রোগীরা। স্বল্প টাকায় হাতের কাছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে খুশি রোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৪ জন নার্সসহ মোট ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালটিতে কর্মরত রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রোগী দেখছেন চিকিৎসকরা। জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ায় এ কার্যক্রম চলবে আগামী জুন মাস পর্যন্ত। মানবতার সেবায় নদ-নদীতে ভাসমান অবস্থায় নাক-কান গলা ও চোখের অপারেশন, জন্মগত ঠোঁটকাটা, হাত-পা পাকা ঠিক করা, ভাঙা অঙ্গের চিকিৎসা, চোখের অপারেশনসহ জটিল রোগের চিকিৎসা বছরের পর বছর দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ইম্পাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ২৫ বছর ধরে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
জাফরাবাদ এলাকার রোগী সুমন হাওলাদার বলেন, '৫০ টাকা দিয়ে চোখের ডাক্তার দেখানোর পর ২০০ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা করিয়েছি। এরপর রোগের সমস্যার সমাধান পেয়েছি। আমাদের জন্য এটি একটি বড় পাওয়া।'
সেবা নিতে আসা রোগী ৭০ বছরের বৃদ্ধা হামিদা বেগম বলেন, 'এখানে বেশি টাকা লাগে না। সবার মুখে মুখে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ছুটে এসেছি। এখানকার চিকিৎসকরাও ভালো।'
ইম্প্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোফাজ্জেল হোসাইন বলেন, হাসপাতালের মূল উদ্দেশ্য হলো, নদ-নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ যাতে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসতে পারে, এজন্য এখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই হাসপাতালে তিনটি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমি দেখি নাক, কান ও গলা, ডা. রিয়াদুল ইসলাম 'জন্মগত হাত-পা বাঁকা রোগীর চিকিৎসা এবং ডা. সুজন আলী চোখের সমস্যা জনিত রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এখানে মাত্র ৫০ টাকা ফি'র বিনিময়ে রোগী দেখা হয়। জটিল রোগী হলে নির্দিষ্ট সময়ে অপারেশনের জন্য বলা হয়। সাশ্রয়ী টাকায় ভাসমান হাসপাতালে অপারেশনেরও ব্যবস্থা রয়েছে।'
ইম্প্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, মানবতার সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। নদ-নদী তীরবর্তী মানুষ বেশিরভাগই একটু হতদরিদ্র হয়। তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়া কঠিন, তাই তাদের সুবিধার্থে হাতের কাছেই আমরা ২৫ বছর ধরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। এক এক এলাকায় দুই থেকে ৬ মাস আমরা অবস্থান করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকি।'