বিলুপ্তির পথে শেফার্ড ফিল্ডের শেষ স্মৃতি লিচু বাগান
প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)
রাজা নেই রাজ্যও বিলীন। তবে সব কিছুতো বিলীন হয় না। পড়ে থাকে কিছু স্মৃতি। ইতিহাসের এমনি ধারাবাহিনীকতায় স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরপুরের কাথুলী সীমান্তের কোল ঘেঁষে লাট সাহেব শেফার্ড ফিল্ডের শেষ স্মৃতি লিচু বাগান। অযত্ন আর অবহেলায় বাগানটি নষ্ট প্রায়। বর্তমান যাদের দখলে এটি তারা সংরক্ষণের সহায়তা চাইলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে যেসব বেনিয়া ভারতবর্ষে এসেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম লাট সাহেব শেফার্ড ফিল্ড। ১৮৩০ সালে তিনি তাঁর স্ত্রী সোফিয়া ফিল্ডকে নিয়ে আসেন এবং মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা কাথুলী গ্রামের মাঠে বসবাস শুরু করেন। পোড়া ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে একতলা বাড়ি নির্মাণ করেন লাট সাহেব। বাড়ির চারদিকে রোপণ করেন ৫০টি লিচুগাছ। লিচুবাগানের পাশেই খনন করা হয় শানবাঁধানো বিরাট একটি পুকুর। আর গড়ে তোলেন বনজ ও ফলজ বৃক্ষের বাগান।
লাট সাহেবের স্ত্রীর মৃতু্য হলে তিনি নিজ দেশ ইংল্যান্ডে চলে যান। পরে বাগানবাড়িটি হাতবদল হয়ে সাধক শ্রী নিগমানন্দের হাতে আসে। তিনি সেখানে নিগমানন্দ সরস্বতী বিদ্যামন্দির নামে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিাণ করেন হাজার দুয়ারী স্কুল। ছাত্র ছাত্রীদের জন্য আলাদা ছাত্রাবাস ও উপসানার জন্য মসজিদ মন্দির ও গির্জা নির্মাণ করেন। স্কুলটি শহরে স্থানান্তরের পর এলাকার মানুষ স্থাপনা ভেঙে ইটগুলো ছাড়িয়ে নেয়। একই অবস্থা কুতুবপুরের দাতব্য চিকিৎসালয় ও হাসপাতালের।
কাথুলী গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ ফজের মন্ডল জানান, লিচুবাগান জ্ঞানবুদ্ধি হওয়ার সময় থেকে তিনি দেখে আসছেন। ছোটবেলায় লিচু পাকার মৌসুমে বাগানের নিচে নানা রকম খেলাধুলা হতো। গাছ থেকে পড়া পাকা লিচু আগে কে কুড়াবে, চলত সেই প্রতিযোগিতা। আগে বাগানে অর্ধশত লিচুগাছ থাকলেও এখন মাত্র ২৪টি লিচুগাছ রয়েছে, যেগুলোর কোনো পরিচর্যা করা হয় না। ফলে বৃক্ষগুলো মৃত প্রায়। পোকার আক্রমণে অনেক গাছের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা ও কীটনাশকের ব্যবহার করলে গাছগুলো রক্ষা করা সম্ভব।
কাথুলী ইউপির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, লিচুবাগানটি বর্তমানে নজরুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্পত্তি। বাগানের বিশালাকৃতির একেকটি গাছে প্রচুর লিচু ধরে। প্রতিবছর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাগানটি ইজারা দেন। তারা কোনো পরিচর্যা করে না। দীর্ঘদিনের অযত্ন-অবহেলায় বেশ কয়েকটি লিচুগাছ মরে গেছে। জীবিত গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কখনো কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, লাট সাহেবের বাগানের লিচুগাছগুলোর পরিচর্যা প্রয়োজন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই গাছগুলো রক্ষায় পরামর্শ ও উদ্যোগ নেওয়া হবে।