কালিয়াকৈরে ফের আগুন
রক্ষা পেলেন অর্ধশতাধিক মানুষ, সর্বস্ব পুড়ে ছাই
প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশু ও নারীসহ ১৬ জন নিহতের ঘটনার শোক কাটতে না কাটতে ফের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনের হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা অর্ধশত মানুষ রক্ষা পেলেও পুড়ে ছাই হয়েছে তাদের সর্বস্ব। সোমবার রাতে উপজেলার পলস্নী বিদু্যৎ উত্তরপাড়া এলাকায় ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী পরিবার ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩৬ জন দগ্ধ হন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা দগ্ধদের উদ্ধার করে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করে। ২৩ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধদের মধ্যে ১৫ জনের মৃতু্য হয়। বাকিরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকলেও মৃতু্যর শঙ্কা যেন কাটছেই না।
এরই মধ্যে সোমবার গভীর রাতে উপজেলার পলস্নী বিদু্যৎ উত্তরপাড়া এলাকার ফুটবল খেলার মাঠের পাশে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার জনি মিয়া ও সোহেল মিয়া নামে দুই ব্যক্তির দুটি কলোনি ভাড়া নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের লোকজন বসবাস করে আসছিলেন। প্রতিদিনের মতো তারা রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু রাত দেড়টার দিকে জনি মিয়ার ভাড়াটে শওকত হোসেনের ঝুটের গোডাউনে হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যেই ওই আগুন জনি ও সোহেলের দুটি টিনশেড কলোনিতে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আগুনের প্রচন্ড তাপে কলোনির বাসিন্দারা জেগে ওঠে দ্রম্নতই ঘর থেকে বের হয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
বাসিন্দারা জানান, তারা আগুন নেভাতে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। এরপর কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ও কোনাবাড়ি ফায়ার সার্ভিসের ১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে আগুনে পুড়ে যায় ১টি ঝুটের গোডাউন, দুটি কলোনির ৩৮টি কক্ষ ও কক্ষের ভেতরে থাকা টাকা, টেলিভিশন, ফ্রিজ, আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সব মালামাল। ক্ষতিগ্রস্তরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রজত বিশ্বাস, পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল আলম তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে এক হাজার টাকা ও ৩টি করে কম্বল দেওয়া হয়।
কলোনির মালিক জনি মিয়া জানান, কলোনির বাইরে ওই ঝুটের গোডাউন। এর আশপাশে প্রায় মাদকসেবীরা নেশা করে। হয়তো ওই নেশাখোরদের অবশিষ্ট বিড়ির আগুন থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে আগুনে পুড়ে আমাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী জানান, ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আগুনের সূত্রপাতের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।
কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে প্রাথমিকভাবে কিছু নগদ টাকা ও কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ঈদের আগে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।