১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার প্রতিরোধে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার গাড়িটানা, যোগ্যাছোলা ও পার্শ্ববর্তী জেলা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার ৪০ জন কিশোর একত্রিত হয় মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছায়। ওই বহরে শামিল হন গাড়িটানা এলাকার আলী আকবর ও বেগম ইয়াকুতুর নেছার তিন পুত্র, পাঁচ কন্যার জ্যেষ্ঠ পুত্র আলী হোসেন। আর বহরের মূল গাইডার (পথপ্রদর্শক) ছিলেন মাটিরাংগা উপজেলার গোমতির যুবক আবদুর রহমান। মাত্র ১৬ থেকে ১৭ বয়সে দেশ রক্ষায় এগিয়ে আসা যুবক ও তার বহর-১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে রামগড় হয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে তৎকালীন মহকুমা শহর রামগড় উপজেলার (বর্তমান মানিকছড়ির) ডাইনছড়ি এলাকায় গিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। ওই সময় সেখানে অবস্থান করা অপর গাইডার (পথ প্রদর্শক) হেম রঞ্জন ত্রিপুরার কবজায় নজর বন্দি থাকা তিন রাজাকারকে গুলি করে মারতে পারলেই প্রশিক্ষণে নেওয়া বা যাওয়ার শর্তজুড়ে দেওয়া হয় এই বহরকে। দেশ বাঁচলে, জীবন বাঁচবে। এই মনোবল নিয়ে যুদ্ধ করার শপথ থাকায় হেম রঞ্জন ত্রিপুরার হাতের গ্রেনেড দিয়ে মুহূর্তে তিন রাজাকারকে হত্যা করতে গিয়ে মোটেও বিচলিত হননি আলী হোসেন।
এরপর আলী হোসেন ও তার বহরে থাকা ৪০ কিশোর হেঁটে মহকুমা শহর রামগড় হয়ে ভারতের সাবরুম দিয়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যুক্ত হন। ২১ দিন প্রশিক্ষণ শেষে (২১০ পস্নাটন) পস্নাটুন কমান্ডার সুবোধ বিকাশ ত্রিপুরার (রামগড়) নেতৃত্বে ১ সেপ্টেম্বর ভোররাতে রামগড়-তাইন্দং-গোমতি-পানছড়ি এলাকায় যুদ্ধের দায়িত্ব নিয়ে দেশ ও জাতির মুক্তিতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী হোসেন ও তার দল।
নভেম্বরে মাসের শেষান্তে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ভাই-বোনছড়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মুখোমুখি হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
৭১' এর ১৭ ডিসেম্বর গুইমারা খাদ্য গুদামে আটক ২৫ থেকে ৩০ জন রাজাকারকে পাহারা দিতে গিয়ে একজন রাজাকারের হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সফিকুল ইসলাম (সফিক) নিহত হন। এটাই ছিল আমাদের চরম ব্যর্থতা। পরে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন স্বাধীনতার ৫২ বছরে এখন শারীরিক নানা কঠিন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কখনো সরকারি আবার কখনো নিজের যৎসামান্য অর্থে হৃদযন্ত্রে ওপেন হার্ট সার্জারি করিয়েছেন।
'একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবননাশে সরকারি হাসপাতালে পরিপূর্ণ চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী হোসেন আক্ষেপ করে বললেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা অসুস্থ হয়ে সরকারি হাসপাতালে গেলে এখনো পরিপূর্ণ চিকিৎসা জুটে না! এটা নেই, ওটা নেই! এসব অজুহাতে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসালয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়! মরার আগে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার দুটি দাবি, জাতির পিতার স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল হওয়া। যেখানে তারা সর্বোচ্চ চিকিৎসা পাবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে তা সম্ভব।'