মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দিলেন ধুনটের অন্ধ পরিবারের সেই আরজিনা

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ২৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দিলেন ধুনটের অন্ধ পরিবারের সেই আরজিনা

ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার আরকাটিয়া গ্রামের অন্ধ পরিবারের এক সদস্য আরজিনা বেগম (৪০)। দু'চোখের দৃষ্টি না থাকায় ফুটফুটে সন্তানটিকেও দেখতে পাননি গর্ভধারিণী মা। তারপরও দৃষ্টিহীন ভালোবাসায় বুকে আগলে রেখেছেন বুকের মানিককে।

দৃষ্টিহীন আরজিনা বেগম বগুড়ার ধুনট উপজেলার আরকাটিয়া গ্রামের দৃষ্টিহীন মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। তবে শুধু আরজিনা বেগমই নয়, তার বাবা মোহাম্মদ আলী, মা জায়দা বেগম, বোন মহেদা, দুখিনী ও ভাই সাইদুলসহ একই পরিবারের ৬জনই অন্ধ। জীবিকার তাগিদে তারা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে। ওই অন্ধ পরিবারের ৩ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ের ভাগ্যক্রমে বিয়ে হয়। তন্মধ্যে দুখিনীর ডিভোর্স হলেও আরজিনা বেগম সংসার করছেন।

গত মঙ্গলবার বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে এক পুত্র সন্তান জন্ম দেন আরজিনা। তবে এক ফুটফুটে সন্তান জন্ম দিলেও মা আরজিনার চোখে দৃষ্টি না থাকায় বুকের মানিকের মুখটাও দেখতে পাননি তিনি। এদিকে দৃিষ্টহীন প্রতিবন্ধী আরজিনা বেগমের ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দেয়ার কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

গত দেড় বছর আগে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি এলাকার আব্দুল কাদের নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে অন্ধ আরজিনা বেগমের বিয়ে হয়। এরপর স্বেচ্ছায় অন্ধ শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই থেকেই বাসবাস করে আসছে ধুনট বাজারের ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা কাদের।

দৃষ্টিহীন আরজিনার স্বামী আব্দুল কাদের বলেন, আমার প্রথম স্ত্রীর মৃতু্যর পর সব কিছু জেনেই অন্ধ আরজিনাকে মানবিক কারণে বিয়ে করেছি। এরপর জীবিকার তাগিদে ধুনট বাজারে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাই।

তবে দীর্ঘদিন ধরেই এই দৃষ্টিহীন পরিবারের ৬ সদস্যকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে ধুনট উপজেলার দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্বপ্নদ্রষ্ট্রা খ্যাত সংগঠন স্বপ্ন সেবা। এই সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনসহ স্বেচ্ছাসেবীরা ২০১৬ সাল থেকে দৃষ্টিহীন পরিবারের অন্তর্দৃষ্টি ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছেন।

স্বপ্ন সেবা সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরাই প্রথম স্বেচ্ছাসেবীরা এই অন্ধ পরিবারের ৬ সদস্যের দায়িত্ব নেই। এছাড়া আমাদের সংগঠন থেকে এই উপজেলার প্রায় ২ শতাধিক প্রতিবন্ধীকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমাদের সংগঠনের সহযোগিতার কারনেই অন্ধ আরজিনা বেগম তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করছে। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে এই অন্ধ পরিবারটি বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে