ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার আমগ্রামের বাসিন্দা জব্বার শেখ। ১৯৭১ সালে সুপারি গাছ থেকে পড়ে কোমড় ভেঙে প্রতিবন্ধিতার শিকার হন। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। ঠিকমতো চলতেও পারেন না। তবু ৭৩ বছর বয়সে উপায়ান্তর না থাকায় কুঁজো হয়ে ভ্যান চালাতে হয় জীবিকা নির্বাহের জন্য।
টুনাবালি শেখের ছেলে জব্বার শেখের জন্ম রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে হলেও বর্তমানে তিনি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার আমগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তার তিন মেয়ের মধ্যে দুই জনের বিয়ে হয়ে গেছে। অপর মেয়ে নিয়েই তার দুইজনের সংসার। ছোট মেয়েটি বর্তমানে বোয়ালমারী সরকারি কলেজে অধ্যয়ন করছে।
১৯৭১ সালে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে সুপারি পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে যান জব্বার শেখ। গাছ থেকে পড়ে কোমড় ভেঙে যায়। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে প্রতিবন্ধিতার অভিশাপ। তখন তার বয়স ছিল ২০ বছর। সে সময় তিনি রিকশা চালাতেন। পরে ঘটনাচক্রে বোয়ালমারীর আমগ্রামে এসে আড়াই শতাংশ জায়গা ক্রয় করে একটি টিনের ঘর তৈরি করেন। সেখানেই মিলেছে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই।
স্ত্রী মারা গেছেন ১৪ বছর আগে। অবলম্বন হারিয়ে এরপর হয়ে পড়েন চরমভাবে অসহায়। জব্বার শেখ সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা মাসিক ৬০০ টাকা পান। এতে কোনোভাবেই সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চালাতে হয়, এতে প্রতিদিন আয় হয় ২০০/২৫০ টাকা। এ টাকায় টেনেটুনে চলে বাবা মেয়ের সংসার।
জব্বার শেখ এই প্রতিনিধিকে বলেন, প্রতিবন্ধী বলে দিনে যাত্রী পাই না, কারণ দিনে প্রচুর ভ্যান থাকে। তাই রাতে ভ্যান চালাই। রাতে ভ্যান কম থাকে তাই যাত্রী পাই। রাত ১২-১টা পর্যন্ত ভ্যান চালাই। বোয়ালমারী পৌরসভার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, জব্বার শেখ আমার পূর্ব পরিচিত। যাত্রীরা দিনে ভয়ে উঠে না। রাতে কোনো ভ্যান না পেয়ে তার ভ্যানে ওঠে। এ ব্যাপারে বোয়ালমারী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী হাসান ফিরোজ বলেন, জব্বার শেখের মতো অসহায় লোকদের পাশে দাঁড়ানো উচিত আমাদের সমাজের বিত্তবানদের।