টাঙ্গাইলের ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউট ও এসডিএসের ৭১২ শতাংশ ভূমি নকল দলিল সৃষ্টি করে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৃথক দু'টি মামলা করেছেন প্রতিষ্ঠান দু'টির চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন সিরাজী। রোববার দুপুরে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ভেকু ও পাঁচটি মাটি বহনকারী ট্রাক জব্দ করেছে পুলিশ। অভিযানের খবর পেয়ে অন্য ভেকু ও ট্রাকের চালক পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী ও গদুরগাতি মৌজার ৫১৪ ও ১৯৮ শতাংশ মোট ৭১২ শতাংশ ভূমি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ (এসডিএস)-এর মালিকানাধীন। জমিগুলো ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে ঋণ নেওয়া হয়। নানাবিধ কারণে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান দু'টির সভাপতি ও চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী ২০০২ সালে গ্রেপ্তার হন। ওই সময় দু'টি প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের ওপর টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। চেয়ারম্যান হাজতে থাকার সুযোগে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নূরুল ইসলামের যোগসাজশে সত্য গোপন করে টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক নিজ নামে উলিস্নখিত ৭১২ শতাংশ ভূমির দলিল রেজিস্ট্রি করে নেন বলে অভিযোগে জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সম্প্রতি ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউট ও এসডিএসের ৭১২ শতাংশ ভূমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। ভেকু মেশিন (খননযন্ত্র) দিয়ে দিনরাত মাটি কেটে তা ড্রামট্রাক ও মাহেন্দ্র ট্রাক দিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। দিনরাত ট্রাক দিয়ে মাটি আনা-নেওয়ায় স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।
আইআরআই ও এসডিএসের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী অভিযোগ করে জানান, আইআরআই ও এসডিএসের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরে জেলা প্রশাসকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও তার প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম নিজে দাতা সেজে জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। ওই জমি নিজের দাবি করে মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক মাটি কেটে বিক্রি করেন। জমির শ্রেণি পরিবর্তনের পাশাপাশি অবৈধভাবে দখল করছেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক জানান, এসডিএসের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজীর নামে সারাদেশে ১৩৫টি মামলা দায়ের হলে ২০০২ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন। ওইসব মামলার মধ্যে তিনটিতে তার সাজা হয়। ফলে এসডিএসের ৪২ জন কর্মকর্তা রেজুলেশন করে নূরুল ইসলামকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। নূরুল ইসলাম ২০১৫ ও ২০১৭ সালে তাকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। এ সময় ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রতিষ্ঠানের কেউ না হয়েও তার কাছ থেকে জমি বিক্রি বাবদ টাকা নেন। পরে তিনি টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে তিনি ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। ইসমাইল হোসেন সিরাজীও জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে মামলা করেছেন। তাই এ বিষয়ে আদালতেই ফয়সালা হবে।
টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) লোকমান হোসেন জানান, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক দীর্ঘদিন করে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছিল। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হয়। পরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে একটি ভেকু ও পাঁচটি মাটি বহনকারী ট্রাক জব্দ করে।