তরমুজের ক্রেতা সংকটে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। দাম কমিয়েও ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না ক্রেতাদের। তাই লোকসানের চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে ব্যবসায়ীদের। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
স্টাফ রিপোর্টার, পিরোজপুর জানান, মৌসুমের শুরুতে বাজারে তরমুজ উঠলেও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে তরমুজের দাম। ফলে ক্রেতা সংকটে ভুগছেন পিরোজপুরের তরমুজ ব্যবসায়ীরা। এবার তরমুজের ব্যবসা করছেন না অনেক মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী।
গত রোববার দুপুরে পিরোজপুর সদর উপজেলা বাজারে ঘুরে দেখা যায়, তরমুজের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় নেই। দোকানে অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের শুরু থেকেই তরমুজের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের তরমুজ কেনার আগ্রহ কম দেখা গেছে। বাজারে কেজিতে তরমুজ বিক্রি না হলেও আকৃতি ভেদে চড়া দাম হাঁকা হচ্ছে। ফলে এত টাকায় তরমুজ নিতে চাচ্ছেন না ক্রেতারা। তরমুজ ব্যবসায়ী প্রসেনজিৎ বলেন, বর্তমানে তরমুজের ক্রেতা অনেক কম। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করলেও আগ্রহ কম। দোকানে পর্যাপ্ত তরমুজ থাকলেও তা বিক্রি করতে পারছেন না। ছোট আকারের একটি তরমুজ ১৫০ টাকা, মাঝারি আকারের তরমুজ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং বড় আকারের প্রতি পিস তরমুজ ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট বড় মিলিয়ে গড়ে প্রতি পিস তরমুজ ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে তাদের।
ফল ব্যবসায়ী রহিম বলেন, 'আমরা এখনকার ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে পাইকারি দরে তরমুজ কিনি। কিন্তু এবার আড়ত থেকে বেশি দামে তরমুজ কিনতে হচ্ছে। সেখান থেকে ছোট বড় মিলিয়ে প্রতি পিস তরমুজ ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে কিনে আনতে হয়। তাই দামও বেশি চাওয়া হচ্ছে। দাম শুনেই ক্রেতারা চলে যাচ্ছেন। বাজারে তরমুজের বাড়তি দামে একেবারে ক্রেতা নেই এবার তরমুজের।'
তরমুজ কিনতে আসা ক্রেতা মনির চৌধুরী বলেন, তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। ঠান্ডা ফল হওয়ায় রমজানে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। তবে এবার তরমুজের দাম অনেক বেশি। যদিও বাজারের দোকানগুলোতে পিস আকারে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু দাম অনেক বেশি। তাই ইচ্ছে থাকলেও তরমুজ কিনতে পারছেন না।
ক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, একটা বড় আকারের তরমুজ কিনতে গেলে ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা লাগে। একজন নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে তরমুজ কেনা এখন স্বপ্নের মতো হয়ে গেছে। তরমুজের দাম ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে হলে ভালো হয়।
পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আবদুলস্নাহ আল মামুন বলেন, পিরোজপুরে তরমুজের আবাদ তুলনামূলক কম হয়। তবুও এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২০ হেক্টর জমিতে। সেখানে ১৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। মূলত তরমুজের প্রধান মৌসুম হচ্ছে এপ্রিল থেকে মে মাস। মৌসুমের আগে যেসব কৃষক তরমুজ তুলতে পেরেছেন তারা ভালো দাম পাচ্ছেন।
গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, থরে থরে সাজানো রয়েছে রসালো তরমুজ। তরমুজের বুক চিরে লাল অংশ দেখানো হচ্ছে ক্রেতাদের। রমজানের শুরুতে যে দর ছিল তা থেকে কমানো হয়েছে অনেকখানি। তবুও মিলছে না কাঙ্খিত তরমুজ ক্রেতা। গেল শনিবার ও রোববার সকালে এ দৃশ্য মেহেরপুরের গাংনীর হাট-বাজারগুলোতে। বলা যেতে পারে, তরমুজের বাজারে ধ্বস নেমে এসেছে।
বাজার অনুসন্ধানে জানা গেছে, রমজানের একদিন আগে থেকে মেহেরপুরের বাজারে আসে সবুজ রংয়ের তরমুজ। মূলত এই তরমুজের জাত গ্রীষ্মকালেই ফলন দেয়। অন্য বছর এপ্রিলের শেষের দিকে বাজারে এ তরমুজ পাওয়া গেলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। রোজায় বেশি দর পাওয়ার জন্য কৃষকরা কিছুটা আগাম আবাদ করেছেন বলে দাবি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অন্য সময় পিচ হিসেবে তরমুজ বিক্রি হলেও গেল কয়েক বছর রমজান থেকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়।
রোজার শুরুতে হাট-বাজারে প্রতিটি তরমুজের দর ছিল ২৫০-৮০০ টাকা পর্যন্ত। প্রথম দু'দিন তরমুজ বেচাকেনায় স্বস্তিতে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ক্রেতাদের অভিযোগ ছিল অনেক। অস্বাভাবিক মূল্য, অপরিপক্ক ও অপুষ্ট তরমুজ এবং কেজিতে বিক্রির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচিত ছিল বেশ। যা বেশ সাড়া পড়ে। কেউ কেউ রমজানে তরমুজ বয়কটের ডাক দেয়।
বয়কটের প্রভাব খোঁজ নিতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা মিলেছে। গাংনী প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি মজনুর রহমান আকাশ জানান, অনেকেই তরমুজ বর্জন করেছেন। সচেতন মহলের একটি বড় অংশই বয়কট বর্জন করে এখনো দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন। ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়বেই। আর এটাই স্বাভাবিক। একই কথা জানিয়েছেন গাংনীর ভিটাপাড়ার তরমুজ ক্রেতা আলেয়া বেগম ও মালেকা খাতুন।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, গেল দু'দিন হাট-বাজারগুলোতে প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। আবার কেজিতেও দাম কমানো হয়েছে। আগে যেখানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল এখন তা কমিয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
গাংনী বাজারের তরমুজ বিক্রেতা শাহীন মিয়া জানান, তরমুজ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় ক্রেতাশূন্য বলা যেতে পারে। এতে লাভের বদলে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। খুলনা মোকাম থেকে যে দরে তরমুজ কেনা হয়েছে তা থেকে অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কাঁচামাল তাই ধরে রাখলে নষ্ট হবে বিধায় লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন।
ব্যবসায়ী বাবুল জানান, এবার একেবারে বাড়তি দাম। তরমুজের দাম শুনেই ক্রেতারা চলে যাচ্ছেন। ৫০ টাকা কেজির নিচে দাম হলে ভালো হতো। তাহলে ক্রেতারাও কিনে খেত, বিক্রি বাড়ত। ভোলা ও বরগুনা জেলায় উৎপাদিত তরমুজ খুলনা মোকাম হয়ে মেহেরপুর জেলায় আসে। মোকামে দর অস্বাভাবিক, তাই খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। মোকামে দর নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে খুচরা পর্যায়ে কমানো সম্ভব না।
জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সজল আহমেদ জানান, দাম বেশি নেওয়ায় রমজানের শুরু থেকে তরমুজের বাজার মনিটরিং করা হয়েছে। কয়েকজন তরমুজ ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়। ব্যবসায়ীদের কেজি দরে নয়, পিচ হিসেবে তরমুজ বিক্রির জন্য বলা হচ্ছে। দাম নাগালের বাইরে থাকায় অনেকেই তরমুজ কিনতে চাইছেন না।