মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মেহেরপুরে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার

দুর্ভোগে এলাকাবাসী
  ২৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মেহেরপুরে ভৈরব নদীতে অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকা নির্মাণাধীন সেতু -যাযাদি

ম মেহেরপুর প্রতিনিধি মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের ভৈরব নদীতে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এই এলাকার মানুষ। প্রয়োজনের তাড়নায় নির্মাণাধীন সেতুর নিচ দিয়ে কাঠ ও বাঁশের পাটাতন তৈরি করে কোনো রকমে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন এলাকার মানুষ। পাটাতনটির অবস্থাও নড়বড়ে। কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় অনেক সময় নদীতে পড়ে যেয়ে আহত হন অনেকে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সেতুর কাজ দ্রম্নত শেষ করার দাবি জানান এলাকাবাসী। জানা গেছে, বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের ভৈরব নদীর উপর প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬.১০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের জুন মাসে শুরু হয় সেতুর নির্মাণকাজ। এই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুন মাসে। টেন্ডারের মাধ্যমে সেতুটির নির্মাণ কাজ পায় ফরিদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামারজানি ট্রেডার্স। কামারজানি ট্রেডার্স কাজটি না করে কুষ্টিয়ার ঠিকাদার সুমন মিয়াকে সাব ঠিকাদার হিসেবে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেয়। সুমন মিয়া ঠিকাদার দায়িত্ব নিয়ে কয়েক মাসের মধ্যে সেতুটির দুটি পিলার ও দুই পাশের সংযোগ সড়কের গাইড ওয়াল তৈরি করেন। বাকি কাজ না করে কাজের জন্য ৫৫ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে সুমন মিয়া লাপাত্তা হয়ে যান। ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নির্মাণের সরঞ্জামাদি। মরিচা ধরে যাচ্ছে রডগুলোতে। সরেজমিন নির্মাণাধীন সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে মরচে ধরা রডে অর্ধনির্মিত সেতুটি। দুই পাড়ে সেতুর সঙ্গে নেই সংযোগ সড়ক। বাধ্য হয়ে সেতুর নীচ দিয়ে পচা কাঠ ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন নারী, পুরুষ, শিশু বয়োবৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। উজলপুর গ্রামের বাসিন্দা সহকারী অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম জানান, সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে কাজ শেষ না করেই চলে যাওয়াটা দুঃখজনক। যে সেতুর কাজ ২০২৩ সালের জুন মসে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু গত ৯ মাস মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সেতুটি। এই সেতুর কারণে এখন চরম দুর্ভোগে পড়েছে গ্রামবাসী। তিনি সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রম্নত শেষ করার দাবি জানান। গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, উজলপুর গ্রামের চাষিদের অধিকাংশ জমি ভৈরব নদীর ওপারে। জমি চাষাবাদ, ফসল ঘরে তোলাসহ চাষের নানা কাজের জন্য সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম থেকে ৩-৪ কিলোমিটার ঘুরে অন্য সেতু দিয়ে চাষাবাদ করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। সময় অপচয় হয়। সেতু নির্মাণ কাজের মালামাল পাহারাদার উজলপুর গ্রামের মো. গরিবলস্নাহ জানান, মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে তিনি সাইড দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন। গত সাত মাস কোনো বেতন পাননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে রাখায় তিনি বেতন পাচ্ছেন না। সেতু নির্মাণের সামগ্রী পড়ে থাকায় কাজও ছেড়ে দিতে পারছেন না। কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বলেন, এ বিষয়ে আমি মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি এলজিইডিকে দ্রম্নত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ মূল ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি দ্রম্নত করে দেবার আশ্বাস দিয়েছে। মেসার্স কামার জানি ট্রেডার্স'র স্বত্বাধিকারী জানান, এ বিষয়ে এলজিইডির সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। একটু সমস্যার কারণে কাজে বিলম্ব হয়। শিগগিরই ব্রিজের কাজ শুরু করা হবে। মেহেরপুর সদর উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী সাব্বির উল ইসলাম বলেন, একটু সমস্য হয়েছিল। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ সম্পাদন করবেন। কাজ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে