মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি পেলেন ১৮১ তরুণ-তরুণী

প্রশংসায় ভাসছেন নওগাঁর ডিসি-এসপি
বরেন্দ্র অঞ্চল (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি পেলেন ১৮১ তরুণ-তরুণী

সরকারি চাকরি নামক সোনার হরিণ পেতে গেলে করতে হবে তদবির। গুনতে হবে কারিকারি টাকা। লাগবে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত মামা-খালু বা আত্মীয়স্বজনের সুপারিশ। সহায়-সম্বল বিক্রি কিংবা সংসারের জমানো অর্থ দিয়ে কর্তা-ব্যক্তিদের করতে হবে ম্যানেজ। কিন্তু এবার দেশের সীমান্তবর্তী বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলা নওগাঁয় জনমনে এ ধারণা পাল্টেছে। সম্প্রতি মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জেলার রাজস্ব প্রশাসনে ১১৬ জন এবং পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৬৫ জন তরুণ-তরুণী। কাজে আসেনি কোনোই যোগাযোগ (তদবির)। হয়নি অর্থের লেনদেনও। আর স্বচ্ছতার সঙ্গে এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জেলাজুড়ে প্রশংসায় ভাসছেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মওলা এবং পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক। নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন অনেক দরিদ্র পরিবারের স্বপ্নবাজ ছেলেমেয়ে। এসব নিয়োগে এমনিতেই নানা অনিয়মের খবর মুখরোচক হিসেবে সমাজে প্রচলিত রয়েছে। তবে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হবে তা ছিল কল্পনাতীত।

নওগাঁ জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার রাজস্ব প্রশাসনে ১৫ ও ১৬তম গ্রেডে ৯টি ক্যাটাগরিতে ড্রাফটসম্যান, নাজির কাম-ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, সার্টিফিকেট পেশকার, সার্টিফিকেট সহকারী, ক্রেডিট চেকিং কাম সায়রাত সহকারী, মিউটেশন কাম সার্টিফিকেট সহকারী, ট্রেসার ও কার্যসহকারী পদে মোট ৩৭টি শূন্যপদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এতে ৬ হাজার ৭৭২ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় ৩ হাজার ৪২ জন অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ণ হন ১০৬ জন। এরপর ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষে গত ১২ ও ১৩ মার্চ রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে মোট ৩৩ জনকে সাতটি ক্যাটাগরিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। সরকারি নিয়মনীতি মেনে দ্রম্নত সুপারিশপ্রাপ্তদের পদায়ন করা হবে। এতে ট্রেসার ও কার্যসহকারী পদে যোগ্যপ্রার্থী না থাকায় ৩টি পদে কাউকে সুপারিশ করা হয়নি।

এ ছাড়া ২০তম গ্রেডে তিনটি ক্যাটাগরিতে অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মোট ৮৩টি পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে নিয়োগের জন্য ৮৩ জনকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করে সংশ্লিষ্টরা। সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা, উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পদায়ন করা হয়েছে।

এদিকে, জেলার রাজস্ব প্রশাসনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৫ ফেব্রম্নয়ারি জেলা প্রশাসনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়ে পোস্ট করেন জেলা প্রশাসক। মুহূর্তের মধ্যেই পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে মন্তব্যের ঘরে জেলা প্রশাসনের প্রশংসায় মেতে ওঠেন অনেকেই। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগের এ ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা নওগাঁবাসীর।

অন্যদিকে নওগাঁর পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুরু হওয়া পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেন দুই হাজার ২৩১ জন প্রার্থী। প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ হন ৫৪৫। গত ৬ মার্চ চর্তুথ ধাপে লিখিত পরীক্ষায় ২২০ জন উত্তীর্ণ হন। যেখানে চূড়ান্তভাবে মৌখিক পরীক্ষায় ৬৫ জন নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চকতাতারু গ্রামের চা বিক্রেতার মেয়ে শ্রাবন্তী বানু তার অনুভূতি ব্যক্ত করে সাংবাদিকদের বলেন, 'ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার। বান্ধবীদের কথায় পুলিশের নিয়োগে ১২০ টাকা খরচ করে আবেদন করেছিলাম। যে দোকান থেকে আবেদন করেছিলাম, অনেকেই বলেছিল এসব নিয়োগে অনেক টাকা লাগে। তারপরও মনোবল হারাইনি। অবশেষে সব পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। না কারও সুপারিশের দরকার হয়েছে, না কোনো টাকা লেগেছে।' শ্রাবন্তীর মতো অনেক দরিদ্র পরিবারের স্বপ্নবাজ ছেলেমেয়ের নাম পুলিশ ও জেলার রাজস্ব প্রশাসনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে। যারা আসলে কল্পনা করতে পারেনি এতো সহজে নিয়োগ হবে।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, 'নিয়োগে কিছু কিছু বিতর্ক থাকায় অনেক বড় চ্যালেঞ্জিং ছিল। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই নিজেদের যোগ্যতা ও মেধায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সে জায়গা থেকে স্বচ্ছতার সঙ্গে আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছি। এখানে কোনো যোগাযোগ ও অর্থের লেনদেন হয়নি।'

জানতে চাইলে নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মওলা বলেন, 'নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর থেকেই আমি প্রচার করেছি; শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হবে। অযথা তদবিরের পেছনে না ছুটে, সবাইকে লেখাপড়া করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমি আমার কথা রেখেছি। কোনো অনিয়ম হতে দেইনি। সামনে আরও একটা নিয়োগ আছে। সেটাও একইভাবে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে