উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আবারও দানা বাঁধছে খনিবিরোধী আন্দোলন, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত চলছে আন্দোলনের প্রস্তুতি।
২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী কয়লা খনি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ীর গণআন্দোলনের ক্ষত না শুকাতে, আবারও ফুলবাড়ী কয়লাখনি ও বড়পুকুরিয়া খনি একত্রিতভাবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় আবারও আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
প্রাচীন সভ্যতা, তিন ফসলি কৃষিজমি, বসতভিটা ঘরবাড়ি ও প্রাচীন শহর একেবারে ধ্বংস করে ফুলবাড়ী কয়লা খনি বাস্তবায়ন করতে আসলে আবারও ২০০৬-এর ২৬ আগস্টের মতো গণআন্দোলন করার হুমকি দিয়েছে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে তারা। সম্প্রতি জ্বালানি মন্ত্রণালয় কয়লা আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশি কয়লা আহরণে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্তর দিক উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা দিয়েছে। এই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে ফুলবাড়ীসহ খনি এলাকায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা, আবার আন্দোলনের বিষয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতারা বলছেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়ন করলে লাভের থেকে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এতে একদিকে যেমন তিন ফসলি জমি হারাবে, তেমনি মানুষের বসবাসের বসতভিটা, হাট-বাজার, কর্মসংস্থান, জীব-বৈচিত্র্য ও প্রকৃতিক ভারসাম্য একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ছাড়া দেশের খাদ্য ভান্ডার বলে পরিচিত দিনাজপুর জেলার প্রায় ৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে, জলবায়ুর ক্ষতি হবে, তাই দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে এই উন্মুক্ত খনির নামে ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।
খনিবিরোধী আন্দোলনের নেতা পলস্নী চিকিৎসক ওয়াজেদুর রহমান বাবলু বলেন, উন্মুক্ত খনি হলে জমির মালিকরা হয়তো কিছু টাকা পাবেন, কিন্তু ওই জমির ওপর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে নির্ভশীল হাজার হাজার প্রান্তিক কৃষক এবং কৃষিশ্রমিক তাদের জীবিকা হারাবে।
ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলনের নেতা ফুলবাড়ী দোকান শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল হক বলেন, খনির কারণে বড়পুকুরিয়া বাজার খনি গর্ভে চলে যাওয়ার পর ওই বাজারের দোকান মালিকরা ক্ষতিপূরণ পেলেও জীবিকা হারিয়েছে কয়েকশ' দোকান কর্মচারী। একইভাবে ফুলবাড়ী খনি উন্মুক্ত হলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা হারাবে। সঙ্গে কয়েক হাজার দোকান কর্মচারী তাদের কর্ম হারাবে। এ কারণে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্টের মতো আবারও গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল কায়ুম বলেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চল ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হবে, এখানে ব্যবসায়ী কৃষক, শ্রমিক সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এই ধ্বংসযজ্ঞ থামাতে হবে। তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদু্যৎ বন্দর রক্ষার জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম বলেন দেশ, জাতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে শাসকগোষ্ঠী জাতীয় সম্পদ লুটপাটের জন্য ফুলবাড়ী ও বড়পুকুরিয়া খনি উন্মুক্ত করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। তাই ২০০৬ সালের ২৬ আগস্টের মতো আবারও গণআন্দোলন করে ফুলবাড়ীসহ জাতীয় সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।