'এক বাও মেলে না, দো বাও মেলে না' এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছুটি গল্পের একটি জনপ্রিয় সংলাপ। কিন্তু রাঙামাটি-লংগদু রুটে লঞ্চে চলাচলকারী যাত্রীদের কাছে গভীর রাতে রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পটি মনে পড়াই স্বাভাবিক। কারণ লঞ্চ যখন ডুবোচরে আটকে পড়ে তখন লঞ্চের লস্কররা হাতে লগি (বাঁশ) নিয়ে এক বাম, দুই বাম বলে চিৎকার করে নদীর পানির গভীরতা মাপেন আর লঞ্চের মাস্টাররা সে নির্দেশনাতেই লঞ্চ পরিচালনা করেন। নাব্য সংকটের কারণে এখন ব্যাহত হচ্ছে রাঙামাটি-লংগদু রুটের লঞ্চ চলাচল। এ কারণে এখন প্রায়ই এই রুটের কোনো না কোনো ডুবোচরে আটকে পড়ছে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো। আর এতে করে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে নদীপথ ঠিক তেমনি যাত্রীদের খরচ ও সময় দুটোই বাড়ছে। গত শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় রাঙামাটি থেকে লংগদু উপজেলার উদ্দেশে ছেড়ে আসা যাত্রী বোঝাই একটি লঞ্চ সন্ধ্যা ৬টায় (ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে) ফোরেরমুখ নামক স্থানে ডুবোচরে আটকে যায়। টানা ৫ ঘণ্টা লঞ্চটি চরে আটকে থাকার কারণে যাত্রীরা অনেক ভোগান্তির শিকার হন।
এদিকে ইফতারের নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও লঞ্চে ইফতার ব্যবস্থা না থাকায় পানি ছাড়া কিছুই জোটেনি যাত্রীদের। সন্ধ্যা পেরিয়ে নামে রাত, নারী ও শিশুদের চোখে-মুখে নেমে আসে অজানা আশঙ্কা; বাড়তে থাকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা!
লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানায়, শুক্রবার বেলা আড়াইটায় রাঙামাটি ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ বাজার লঞ্চঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। লঞ্চটি কাট্টলী বিল শেষে ফোরেরমুখ বিল পার হওয়ার সময় সন্ধ্যাবেলা ডুবোচরে আটকে যায়। দীর্ঘসময় চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে মাইনী ঘাটে থাকা আরেকটি লঞ্চের সহযোগিতায় ১১টা ৪৫ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছায় লঞ্চটি। তবে ডুবোচরে আটকে পড়ায় লঞ্চ চালকের অসাবধানতাকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ।
লঞ্চের যাত্রী মো. সুজন (৪০) বলেন, দীর্ঘসময় লঞ্চ নদীতে আটকে যাওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করেছে জনমনে। অন্যদিকে ছিল শিশুসহ বড়দের ইফতার নিয়ে দুশ্চিন্তা। যদিও লঞ্চের ক্যান্টিনে হালকা খাবারের ব্যবস্থা যা হয়েছিল তা তুলনামূলক দাম ছিল বেশি।
যাত্রীরা অভিযোগ করে আরও বলেন, মাইনী থেকেও ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে অনেকের গন্তব্য। এ মধ্যরাতে বাড়ি যেতে কারও প্রয়োজন মোটর বাইক, কারো প্রয়োজন ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এই রাতে আর বাড়ি ফিরতে পারবে না বলে অভিযোগ করেন তারা। নিরাপদে রাত্রিযাপন ও সেহরির নিশ্চয়তা, এই মুহূর্তে কোনোটাই নেই তাদের....
সচেতন নাগরিকরা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির নাব্য সংকটের কারণে প্রায়ই এরকম হয়রানির শিকার হতে হয়। অথচ প্রশাসন এখনো নির্বিকার, উলেস্নখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই নৌপথ। প্রায় প্রতি বছরই পলি জমে সৃষ্টি হয়েছে অনেক ডুবোচর। ফলে যাতায়াত অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই নৌপথটি। দ্রম্নতই ড্রেজিং করা না হলে কিংবা বিকল্প সড়ক সংযোগ স্থাপন করা না হলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হবে জেলা সদরের সঙ্গে লংগদু ও বাঘাইছড়ির উপজেলাবাসীর নৌপথে যোগাযোগ।