মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

মেহেরপুরে এখন সবুজ সোনা সজনে ডাঁটা

বাম্পার ফলন ও দামে খুশি গৃহস্থ-চাষি
মেহেরপুর প্রতিনিধি
  ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মেহেরপুরে গাছে গাছে সজনে ডাঁটার বাম্পার ফলন -যাযাদি

'কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা, সজনে ডাটায় ভরে গেছে গাছটা, আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি-খোকা তুই কবে আসবি! কবে ছুটি?'

কবি আবু জাফর ওবায়দুলস্নাহর বিখ্যাত কবিতা 'মা গো, ওরা বলে'-এর বাস্তবচিত্র এখন মেহেরপুরের প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায়। ছেলেদের প্রতি মায়েদের এমন আর্তির পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে সজিনা ডাটা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। সজিনা পাতা ও ডাটা পুষ্টি ও ভেজষ গুণে ভরা সবজি হিসেবে খুব দামি। ফলে দিন দিন বসতবাড়ির আশপাশে, রাস্তার ধারে, ক্ষেতের আইলে এবং বাণিজ্যিক সজিনা ক্ষেত বাড়ছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার সজিনা গাছ আছে। প্রতি হেক্টরে ফলন ৪ থেকে সাড়ে ৪ টন। দেশে ২টি জাত আছে, একটি হালো সজিনা ও আর একটি নজিনা। ভারত থেকে হাইব্রিড সজিনার জাত এদেশে এসেছে। এ জাতের বীজ বপন করে লাগাতে হয়। হাইব্রিড জাতের সজিনা গাছে দুইবার ফুল আসে। ফেব্রয়ারি-মার্চ ও জুন-জুলাই মাস। গত বছর জেলায় ৬০ হাজার সজিনার ডাল রোপণ করা হয়েছে। সজিনা গাছের পাতা, ফুল, ফল, বাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজিনার পুষ্টি গুণ অনেক। অনেক গুণ থাকায়, এ গাছকে 'যাদুর গাছ' বলা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর মেহেরপুর জেলায় সর্বোচ্চ সজিনার ফলন হয়েছে। সজিনায় উচ্চ মূল্য পাওয়ায় চাষিরা খুশি। শুরুতে বাজারে সজিনার কেজি ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে বর্তমানে বিভিন্ন সাইজ হিসেবে ১৪০-২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভালো দাম পাওয়ায় এখন রোজার মাসে এই সজনে ডাটা বিক্রি করে সামনে ঈদের কেনা-কাটা করছে অনেকে।

পুষ্টিবিদ ডা. অলোক কুমার দাস জানান, সজিনার পাতা, ফল, ফুল, বীজ, ছাল, মূলের ভেজষ গুণও আছে। তাই সজিনা গাছের বিভিন্ন অংশ ভেজষ চিকিৎসায় কাজে লাগে। সজিনার পাতার পুষ্টি গুণ অনেক, যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন তা শরীরে পুষ্টি যোগাবে, আর ঔষধি গুণ তো আছেই। সজিনার পাতায় যে পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে তা অনেক পুষ্টিকর খাবারেও নেই। যেমন- ডিমের চেয়ে বেশি আমিষ, দুধের চেয়ে বেশি ক্যালশিয়াম, কমলার চেয়ে বেশি ভিটামিন সি, কলার চেয়ে বেশি ক্যালশিয়াম, গাজরের চেয়ে বেশি ভিটামিন এ আছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজিনার সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। প্রতি বাড়িতে কমবেশি সজিনা গাছ আছে। সজিনা পুষ্টিকর সবজি হিসেবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে