রাঙামাটির কাপ্তাই পাল্পউড বাগান উজাড় করে প্রতিদিন অর্ধশত যানবাহনে শতশত ঘনফুট কাঠ পাচার চলছে। সন্ধ্যা থেকে ভোর সকাল পর্যন্ত চাঁদের গাড়ি জিপ ও বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে পাল্পউড (নরম কাঠ) বাঙ্গালহালিয়া-রাইখালী-লিচুবাগান ও কোদালা সড়ক দিয়ে বিনাবাধায় পাচার হয়ে যাচ্ছে।
কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের সৃজিত বনায়নের হাজার হাজার ঘনফুট পাল্পউড (নরম কাঠ) চোরাইপথে পাচারের কারণে পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাবে কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএমে) উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে বলে মিলের ব্যবস্থাপনা সূত্রে জানা গেছে। বিনা বাধায় কাঠ পাচারের কারণে সরকার এ খাত থেকে মাসে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
কর্ণফুলী পেপার মিল সূত্র জানায়, বিসিআইসির অন্যতম প্রতিষ্ঠান চন্দ্রঘোনাস্থ কর্ণফুলী পেপার মিলে (কেপিএম) কাগজ উৎপাদনের প্রধান সহায়ক কাঁচামাল পাল্পউড (নরম কাঠ) জোগান দেওয়ার লক্ষে কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের আওতায় লাখ লাখ একর বনভূমিতে নরম কাঠের পাল্পউড বাগান সৃজন করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর ধারাবাহিকভাবে কাপ্তাই পাল্পউড বাগান থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাল্প সরবরাহ করে কেপিএমে কাগজ উৎপাদন সচল রাখতে সক্ষম হয়। পরে কারখানায় অনিয়ম, দুর্নীতি, গাফিলতি ও বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ২০১৭ সাল থেকে নরম কাঠ পাল্পউড ও বাঁশ দিয়ে কাগজ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে বিদেশি পাল্প ও ছেঁড়া কাগজ দিয়ে সীমিত আকারে কেপিএমে কাগজ উৎপাদন চলছে।
মিলের সাবেক পাল্পউড নরম কাঠ সরবরাহকারী এক ঠিকাদার বলেন, কেপিএমে পাল্পউড দিয়ে কাগজ উৎপাদন বন্ধ থাকার সুযোগে বনদসু্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে সৃজিত পাল্পউড বাগানে শতশত কাঠুরিয়া প্রবেশ করে কচি গাছ পাচার চালিয়ে যাচ্ছে।
মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে শতভাগ কাঠ পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না বলে কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক বন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
উলেস্নখ্য, গত ১৬ মার্চ রাইখালী রেঞ্জের ভালুকিয়া এলাকায় বিজিবি সদস্যদের সহায়তায় পাল্পউড বাগান বিভাগের রাইখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বন বিভাগের কর্মীরা অভিযান চালিয়ে ২৩০ ঘনফুট জ্বালানি কাঠ আটক করা হয়। গত ১৭ মার্চ রাঙ্গুনিয়া কোদালা বাজারে যৌথ অভিযান চালিয়ে ৫৩৫ ঘনফুট সেগুন ও গামারী কাঠ উদ্ধার করা হয়।