বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পানি দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এবারের পানি দিবসের প্রতিপাদ্য 'ওয়াটার ফর পিস' বা 'শান্তির জন্য পানি'। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ১০টায় বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সামনে জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের আয়োজনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মুখার্জী রবীন্দ্রনাথ রায়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট লুনা সিদ্দিকী, যায়যায়দিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ইসরাত জাহান, প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শেখ আজমল হোসেন, এনজিও প্রতিনিধি আব্দুস সালাম, মো. কামরুজ্জামান ও হাসিবুর রহমান প্রমুখ। সমাবেশ সার্বিকভাবে পরিচলানা করেন উদয়ন বাংলাদেশের নির্বাহী প্রধান শেখ আসাদ।
এ সময় বক্তারা বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ভূউপরিস্থ পানির আধার নষ্ট হওয়া, মানুষের সৃষ্টি প্রবাহমান নদ-নদীতে অবৈধ বাঁধ ও স্স্নুইস গেটের অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের কারণে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়া ভূ-উপরিস্থ জমি ও পানির লবণাক্ততা এবং অত্যাধিক ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে শুস্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যায়।
এতে বাগেরহাটসহ দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলার প্রায় চার কোটি মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুন্দরবন উপকূলের ৭৩ শতভাগ মানুষ সুপেয় পানি পান করতে পারছেন না। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। তাই এই সংকট নিরসনে নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষসহ সচেতন মহলের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আসন্ন বাজেটে এ অঞ্চলের মানুষের সুপেয় পানির জন্য অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।'
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানায়, নীলফামারীতে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষের্ যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফারুখ আলম মাসুদ। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
পরে একটির্ যালি শহর প্রদক্ষিণ করে। এতে বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, 'পানির জন্য উপকূলে দুঃখ বারো মাস, সুপেয় পানির অভাব আর লবণাক্ততায় সর্বনাশ' স্স্নোগানকে সামনে রেখে বরগুনার পাথরঘাটায় খালি কলসি 'কলসি বন্ধন' অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিষখালী নদীসংলগ্ন চরলাঠিমারা গ্রামের একটি মাঠে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রায় তিন শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দাসহ সিসিডিবি, এনএসএস, বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশন, চরলাঠিমারা, সিসিআরসিসহ ৩০টি বেসরকারি, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অংশগ্রহণ করে।
এ সময় 'আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ' লবণাক্ত এবং খারাপ পানি ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে চায়না এমন চিন্তা করে একাধিক শিশু খালি কলসি নিয়ে প্রতীকী আয়োজন করে।
বক্তব্য রাখেন পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন, বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশনের সহকারী ম্যানেজার মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ, সিসিডিবির প্রকল্প সমন্বয়কারী রতন মজুমদার, সমাজসেবক নয়ন আহমেদ, স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন, সোহরাব হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, 'পাথরঘাটায় পর্যাপ্ত সুপেয় পানি পাওয়া যায় না। এখানকার মানুষের মধ্যে নিয়মিত দেখা যায় পানির জন্য হাহাকারের চিত্র। এক কলসি পানির জন্য তাদের পাড়ি দিতে হয় কয়েক গ্রাম। তারপরেও অনেক সময় খাওয়ার মতো পানি না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। প্রতি বছরই বিভিন্ন এলাকায় মিঠা পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এতে সুপেয় পানির অভাব দিন দিন আরও বাড়ছে।'
বক্তরা আরও বলেন, 'এখানে শুকনো পুরো মৌসুমে পানির সংকট তীব্র থাকে। বিশেষ করে পাথরঘাটায় গভীর নলকূপ স্থাপন সম্ভব না হওয়ায় এখনকার মানুষের দুঃখের যেন শেষ নেই।'
সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, উপকূলের মানুষের পানির দুঃখ বারো মাস।
উপকূলের পানির কান্না কেউ শুনতে পায় না। প্রকৃতিগতভাবেই এখানে পানির থাকে তাই বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
সরকারি এবং বেসরকারিভাবে পানি সংরক্ষণের জন্য টাংকি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এলাকার নদ-নদীর পানি রিফাইন করে স্থায়ীভাবে পানি সরবরাহ ও সংরক্ষণসহ নতুন নতুন উপায় বের করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ, ছোট থেকেই শিশুদের সুপেয় পানির মাধ্যমে পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। তা না হলে বংশ পরম্পরায় উপকূলের মানুষ রোগ-শোক নিয়ে জীবন চলতে হবে।