বরাবরের মতো এবারও পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। 'আমরা তিমির বিনাশী' এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে। ছবি এঁকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন শিল্পী অধ্যাপক হাশেম খান।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের উপস্থিতিতে অনুষদ প্রাঙ্গণে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির উদ্বোধন করেন তিনি। এসময় হাসেম খান বলেন, এই চারুকলা অনুষদ থেকে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়। সেই পাকিস্তান আমল থেকে এটি শুরু হয়েছিল। তখন পাকিস্তানি সংস্কৃতির নামে এক ধরনের জগাখিচুড়ি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। তারই তীব্র প্রতিবাদ ছিল এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। এক মাস ধরে আমাদের শিল্পীরা মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেবে। সমস্ত অশুভ শক্তিকে রুখে দেওয়ার জন্য আমাদের শিল্পীরা প্রস্তুত।
তিনি বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, 'সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্যই এ ধরনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। তরুণ বয়সে আমরা রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা করিনি। তাদের নিষেধ সত্ত্বেও আমরা বন্দুকে আলপনা এঁকেছি, শহীদ মিনারের আলপনা এঁকেছি, চারুকলা ভবনের সামনে আলপনা এঁকেছি। চারুকলার তৎকালীন ছাত্র-শিক্ষকরা এ বাংলাকে জাগিয়ে তোলার জন্য ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যা যা করার দরকার তা সব করেছিলেন। আমরা চাই জনসাধারণ আমাদের সঙ্গে একাত্ম হোক। কারণ, এ আয়োজন আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য।'
আয়োজন নিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, 'আমরা এ যাবত অনেকের বাণীই তুলে ধরেছি। তবে আমাদের সাহিত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবি জীবনানন্দের কোনও পঙক্তি সামনে আনিনি। তাই এবার কবির তিমির হননের গান কবিতার একটি লাইন আমরা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি। এটি তরুণ প্রজন্মের মুখে উচ্চারিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো 'আমরা তিমির বিনাশী।'
প্রসঙ্গত, ১৯৮০'র দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একইসঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম আনন্দ শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়।