নানামুখী উদ্যোগে উন্নয়ন আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাল্টে যাচ্ছে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের সার্বিক পরিবেশ। সেবার মান উন্নত হওয়ায় বেড়েছে রোগীদের উপস্থিতি। কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না থাকায় সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বৃহৎ উপজেলা রায়পুরা। এখানে বসবাসকারী প্রায় ৭ লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা এই ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারে এবং নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স কর্তৃপক্ষ। জরুরি বিভাগ, আন্তঃবিভাগ এবং বহির্বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য বর্ধনে নেওয়া হয়েছে যুগোপযোগী নানা প্রদক্ষেপ। সেবার মানোন্নয়নসহ সার্বিক শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় এটিকে রায়পুরা উপজেলার স্বাস্থ্য খাতের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অর্জন ও এক অনন্য সুন্দর সফলতা হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে স্থানীয় সচেতন মহল।
সম্প্রতি পর পর কয়েকদিন স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন চিত্র। কমপেস্নক্সের বিভিন্ন বিভাগগুলো আগের চেয়ে গুছানো ও পরিচ্ছন্ন দেখাচ্ছে। হঠাৎ করে দেখে সরকারি হাসপাতাল মনে হবে না। বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। শত শত নারী-পুরুষ সেবা নিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। এরই মধ্যে স্ব স্ব কক্ষে ডাক্তার সেবাদান অব্যাহত রাখলেও সাড়ে ১২টার পরপরই বন্ধ হয়ে যায় ওষুধ সরবরাহ কার্যক্রম। শেষের রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারলেও বিনা ওষুধে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
সেবা নিতে আসা শরিফা বেগম, মনোয়ারা, আলাক মিয়াসহ বেশ কয়েকজন বলেন, 'আমরা অনেক দূর থেকে এসে এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে টিকিট কেটে এতক্ষণে ডাক্তার দেখিয়ে এসে দেখি ওষুধ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। যারা আমাদের আগে আসছে তারা ওষুধ পেয়েছে। আমরা এত কষ্ট করে এসেও ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি।'
এদিকে, সেবা নিতে আসা শাহ আলম, চান মিয়া, রোকসানা বেগম বলেন, 'এক সময় সরকারি এই হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসক ও ওষুধ পাওয়া যেত না। এখন ৫ টাকার টিকিট কেটে অনেকগুলো ওষুধ পাচ্ছি। এতগুলো ওষুধ বাইরে থেকে কেনার সামর্থ্য ছিল না আমাদের।'
স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের ভারপ্রাপ্ত ভান্ডাররক্ষক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, 'সেবার মান উন্নত হওয়ায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা। আমরা প্রতিবছর একবার ওষুধের বরাদ্দের চাহিদা পাঠাই। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের শুরুতে এক কোটি টাকা বরাদ্দের চাহিদার বিপরীতে ৬২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৭ টাকা বরাদ্দ পাই। এর মধ্যে ২টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চলে যাবে ৫ লাখ টাকা। চাহিদা পাঠানোর সময় মাসে গড়ে রোগীর সংখ্যা ছিল ১০-১১ হাজার জন। বর্তমানে মাসে গড় রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬-১৭ হাজারে। রোগীদের উপস্থিতি ও চাহিদা মোতাবেক ওষুধ বরাদ্দ পেলে শতভাগ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত সম্ভব হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খান নূরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, এখানে সেবার মান আগের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক থাকায় রোগীদের সংখ্যা বেড়ে এখন দিগুণ। চলমান অবস্থায় ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রয়োজন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে লিখিতভাবে জানিয়েছি।