সাঁথিয়ায় রাত জেগে পাহারা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না পেঁয়াজ চুরি

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পেঁয়াজের ভান্ডারখ্যাত পাবনার সাঁথিয়ায় গত বছর পেঁয়াজ চাষে লোকসান হওয়ায় চলতি বছর মুড়ি) পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়েছেন কৃষকরা। বর্তমান হালি পেঁয়াজেও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি তারা। তবে শঙ্কার কথা হলো, রাত হলেই ক্ষেত থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজ। এতে আতঙ্কে রয়েছেন কৃষকরা। বর্তমান পাইকারি বাজার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সাধারণ ক্রেতারা মনে করছেন, ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের এমন দাম অনেকটাই অস্বাভাবিক। আর এই অস্বাভাবিক দামের কারণে প্রতিরাতেই ক্ষেত থেকে চুরি হচ্ছে কাঁচা পেঁয়াজ। কোনো কোনো চাষি আবার চোরের ভয়ে পুষ্ট হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন অনেক চাষি। এমনকি পাহারা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না পেঁয়াজ চুরি। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ১৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল আগাম বা মুড়িকাটা (মূলকাটা) জাতের পেঁয়াজ, যা অনেকদিন আগেই বিক্রি হয়েছে। বাকি সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে হালি জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে। আর এখন মাঠে রয়েছে দানার দেশি হালি পেঁয়াজ। এসব জমির পেঁয়াজই চুরি হয়ে যাচ্ছে। পাটগাড়ি এলাকার পেঁয়াজ চাষি মন্টু খান জানান, এ বছর ধার, দেনা করে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। রাতে পাহারায় থাকেন। তারপরও গত ১৭ মার্চ রাতের কোনো এক সময় ক্ষেত থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ মণ পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে। পাটগাড়ি এলাকায় গিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে তায়জাল খান, মুন খান, মজিদ প্রাং, হামিদ প্রাং ও ভিটাপাড়া গ্রামের শাহ আলম প্রামাণিকসহ অন্তত ১০ জন কৃষকের ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়েছে। রাত জেগে পাহারায় থাকার পরও তায়জাল খানের প্রায় ৮ মণ পেঁয়াজ চুরি হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। তাই তিনি পেঁয়াজ তুলে ফেলার কথা ভাবছেন। অথচ তার পেঁয়াজ পুরোপুরি পুষ্ট হতে এখনো প্রায় ২০ দিন সময় লাগবে। নূর নবী প্রাং জানান, এ বছর ধার, দেনা করে দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। বাড়ি থেকে পেঁয়াজের ক্ষেত দূরে হওয়ায় সব সময় পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে প্রতি রাতেই অন্য কৃষকদের সঙ্গে ক্ষেতে বসানো ছাউনিতেই থাকছেন তিনি। জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন আলহাজ সরদার। তিনি বলেন, এ বছর পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। দামও খুব ভালো পাওয়ায় চোরের উৎপাত বেড়ে গেছে। পুরো পুষ্ট হওয়ার আগেই জমির সব পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করে দিচ্ছি। উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চোরের ভয়ে পেঁয়াজের ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ছাউনি। রাতে কৃষকরা সেখানে বসে পেঁয়াজ ক্ষেতে পাহারা দেন। এ ছাড়া যেখানে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে পুষ্ট হওয়ার আগেই জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে নিচ্ছেন। সাঁথিয়া উপজলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের এই ভরা মৌসুমে কৃষকরা এবার ভালো দাম পাচ্ছেন। আর ভালো দামের কারণেই কোনো কোনো জায়গায় ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হচ্ছে। চুরির বিষয়টি শিগগিরই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানায় জানানা হবে।