ঝিনাইদহে চাষিদের উৎপাদিত সবজি স্থানীয় বাজার থেকে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি দামে। ফলে কৃষকের কষ্টে উৎপাদিত সবজি বেশিরভাগ টাকা চলে যাচ্ছে মধ্যস্তভোগী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের পকেটে। সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ চাষিদের। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব আর ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যকেই এসব সমস্যার মূল কারণ বলছেন কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
যদিও জেলা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর বলছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আপাতত সবজি বাজারে অভিযান বা মনিটরিং বন্ধ রয়েছে।
ঝিনাইদহে প্রতি কেজি বিভিন্ন সবজি ক্ষেত থেকে বেপারীদের কাছে বিক্রি করছেন ১২-৪৫ টাকা। সেই একই সবজি স্থানীয় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি দামে। অন্যদিকে ওই একই সবজি বেপারীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে তিন থেকে চারগুণ বেশি মূল্যে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন জেলার বিভিন্ন মাঠ ও বাজার ঘুরে এ রকম চিত্রই দেখা গেছে। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে শোভা পাচ্ছে লালশাক, সবুজশাক, পেঁপে, লাউ, করলা, ভেন্ডি, ক্ষিরা, পটোল, টমেটো, কচুর লতি, বেগুন ও সিমসহ নানা জাতের দেশীয় সবজি। শুধু সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ হয়েছে।
ঝিনাইদহে বৃহস্পতিবার পাইকারি ও খুচরা সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি লাউ প্রতি পিস ১০ টাকা বিক্রি হলেও তা স্থানীয় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, পটোল ও করলা খুচরা ৩৫ টাকা কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি ৫০ টাকা, ভেন্ডি ২০-২৫ টাকা পাইকারি বাজারে বিক্রি হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, কচুরলতি পাইকারি ৪৫ টাকা হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। দেশি ক্ষিরা পাইকারি ৪০ টাকা হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মিষ্টি কুমড়া ২৮ থেকে ২০ পাইকারি হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি। বেগুন পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। সে একই বেগুন স্থানীয় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। স্থানীয় সবজি বিক্রেতারা সেগুলো আড়তদারের মাধ্যমে কিনে স্থানীয় খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন কেজিতে ২০ টাকা বেশি দামে। এর মধ্যে আবার আড়তদারের কমিশন কাটা হয় কেজিতে ১ টাকা।
পাইকারি বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক আব্দুর রহমান, প্রান্ত মিয়া ও টিটুল হোসেন জানান, বেপারী, ফড়িয়া, খুচরা বিক্রেতাদের জন্য আমরা সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। ফলে লাভের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসছে। তাই এদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
তবে অতিরিক্ত বেশি দামে সবজি বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন ফড়িয়া ও বেপারীরা। স্থানীয় বেপারী ঝন্টু মিয়া ও আড়তদার বিমল কুমার বিশ্বাস জানালেন বেশি দামে সবজি বিক্রির কথা। চাষিদের কাছ থেকে সবজি কিনে কয়েক টাকা বেশি লাভে বিক্রি করেন তারা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে এ নবী জানান, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। তাদের লাভের পরিমাণ কমে আসছে।