কেরানীগঞ্জে-ঘাটাইলে 'ভুল চিকিৎসায়' রোগীর মৃতু্যর অভিযোগ
প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
'ভুল চিকিৎসায়' কেরানীগঞ্জে শিক্ষার্থী ও টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে পাইল অপারেশনে এনেসথেসিয়া পুশ করার পর রোগীর মৃতু্যর অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। এ ঘটনায় চিকিৎসকের বিচার দাবি করেন তারা। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও স্বজনরা অভিযোগ তোলেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, অ্যাপেন্ডিসাইটিস চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় তাসনিয়া জাহান তনয়া (১২) মৃতু্য হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। বুধবার সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বিষয় নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, তনয়া বাবা মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর রুহুল আমিন, সার্জন শামসুদ্দিন আহমেদ ও এনেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান ডা. তাসফিয়া তাবাসসুমসহ পাঁচজনের নামে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় চারজন চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বেলা বারোটার দিকে ওই রোগী মারা যায়। এর আগে পেটেব্যথা নিয়ে গত রোববার বিকালে তনয়াকে আদদ্বীন হাসপাতালের কেরানীগঞ্জ বসুন্ধরা শাখায় ভর্তি করানো হয়।
তাসনিয়ার বাবা মনিরুজ্জামান জানান, 'তাসনিয়া সোনারগাঁও উদয়ন আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুলের ছাত্রী। আমার মেয়ের গত কয়েকদিন আগে পেটেব্যথা হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ দেওয়া হলে ব্যথা কমে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় তার অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সমস্যা আছে। পরে অপারেশনের জন্য মেয়েকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ বসুন্ধরা আদ-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে আসি। অপারেশনের জন্য দুপুর ২টার দিকে ওটিতে হেঁটেই যায় তাসনিয়া।'
তিনি আরও বলেন, 'ওটিতে যাওয়ার দুই ঘণ্টা পরও মেয়ের কোনো খবর পাচ্ছিলাম না। পরে জোর করে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে প্রবেশ করে মেয়ের নিথর দেহ দেখতে পাই। এরা ভুল চিকিৎসা করে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে, আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।'
এদিকে কেরানীগঞ্জ বসুন্ধরা আদ-দ্বীন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
আদ-দ্বীন হাসপাতালের এজিএম সিদ্দিকুর রহমান সুমন বলেন, স্কুলছাত্রী তাসনিয়া জামান তনয়াকে চিকিৎসার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে নেওয়ার পরই মেয়েটি অচেতন হয়ে যায়। এরপর সেখানে চিকিৎসকরা ভুল চিকিৎসা করেছিলেন কিনা তা তিনি জানেন না বলে জানান।
এদিকে, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের মমরেজ গলগন্ডা গ্রামের গৃহবধূ হোসনে-আরা বেগম (২৪) ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওই গ্রামের সৌদি প্রবাসী কবির হোসেনের স্ত্রী।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার মমরেজ গলগন্ডা গ্রামের সৌদি প্রবাসী কবির হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরা বেগমের ননদের স্বামী রাজিব আলোক হেলথ ফাউন্ডেশন চাকরির সুবাধে পাইলস অপারেশন জন্য গত সোমবার দুপুরে আলোক ফাউন্ডেশন অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ সময় এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তসলিম উদ্দিন কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বিকাল ৪টায় রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার পরই রোগীর খিঁচুনি এবং বমি শুরু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে রাত ৯টায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। পরে ঢাকা নেওয়ার পথে রাস্তায় তার মৃতু্য হয়।
নিহতের দেবর মান্নান রহমান সাত্তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, 'অবশের ইনজেকশন দেওয়ার পরই ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর মৃতু্য হয়।'
রোগীর মৃতু্যর বিষয়ে এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তসলিম উদ্দিন জানান, 'এনেসথেসিয়া (অবস) ইনজেকশন পুশ করার পরে রোগীর খিঁচুনি ওঠে এবং ছটফট করে। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টের জন্য ঢাকায় অবস্থিত আলোক ফাউন্ডেশন হাসপাতালে পাঠানো হয়।'
এ বিষয়ে ঘাটাইল আলোক ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সিদ্দিকুর রহমান জানান, 'রোগীকে লিফটে করে ওপরে ওঠানোর সময় তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।'