সোহাগী জাহান তনু। কুমিলস্না ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী। ২০১৬ সালে ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃতু্য হয় তার। কুমিলস্না সেনানিবাসের জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়। বুধবার সোহাগী জাহান তনু হত্যাকান্ডের আট বছর। এই আট বছরেও তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ বা অন্য কোন সংস্থা। এদিকে গত তিন বছর তনুর পরিবারের খবর নেয়নি কেউই। এ অবস্থায় বিচার পাবার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তনুর বাবা-মা।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, 'পিবিআই ঢাকায় বসে বক্তৃতা দেয়। আমাদের ডেকে পাঠিয়ে উল্টো হয়রানি করে। আমরা গরিব। তাই বলে কারো গোলাম না যে যার কারণে মেয়ে হত্যার বিচার পাব না। তাকে অনেক কষ্ট করে লালন করেছি। কী বেদনা নিয়ে বেঁচে আছি, আলস্নাহ ছাড়া কেউ জানে না।'
তিনি বলেন, 'কলিজার টুকরাটাটা কবরে। তাকে ছাড়া ঈদ কিভাবে করব?' তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বিচার না পাওয়া নিয়ে বলেন, 'আমি আর বিচার চাই না। বিচার চেয়ে কী লাভ? গরিবের ওপর জুলুমের বিচার হয় না।'
তনুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিলস্না সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর ফেরেননি তনু। পরে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়। পরদিন তার বাবা কুমিলস্না ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিলস্না। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃতু্যর সুস্পষ্ট কারণ উলেস্নখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে ২০২০ সালের নভেম্বরে মামলাটির দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া হয়। পিবিআই ঢাকার একটি টিম দায়িত্ব পাওয়ার শুরুর দিকে কুমিলস্না ক্যান্টনমেন্টে ঘুরে যান।
২০২৩ সালের ৮ আগস্ট তনুর খালাতো বোন লাইজু জাহানের সাক্ষ্য নেওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। নির্ধারিত সময়ে তনুর বাবা-মা ও ভাইসহ লাইজু জাহান কুমিলস্না পিবিআই কার্যালয়ে হাজির হওয়ার পর তাদের জানানো হয় তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থ, তাই সাক্ষ্য গ্রহণ স্থগিত করা হয়। মামলায় সাক্ষ্য দিতে লাইজু তার সিলেটের স্বামীর বাড়ি থেকে একদিন আগে কুমিলস্নায় পৌঁছেন। পূর্ব নির্ধারিত সময়ে লাইজু, তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তনুর ছোট ভাই রুবেল হোসেন কুমিলস্নার নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায় পিবিআই অফিসে পৌঁছেন। পরে তাদের জানানো হয় তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থ, তাই সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে না। এরপর অন্ধকারে ঢাকা পড়ে মামলার কার্যক্রম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মজিবুল হক জানান, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা আসামিদের শনাক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।