বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গম চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় বাড়ছে আবাদের পরিমাণ
স্বদেশ ডেস্ক
  ২১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামে বাম্পার ফলন হওয়া একটি ভুট্টা ক্ষেত -যাযাদি

ভালো দাম পাওয়ায় ভুট্টা চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও লক্ষ্ণীছড়ি এবং কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামে চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষ করে বাম্পার ফলনের আশা করছেন সেখানকার কৃষকরা। তাই গম দিয়ে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন তারা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও লক্ষ্ণীছড়ি উপজেলায় প্রথমবারের মতো রবিশস্য প্রণোদনা কর্মসূচি ও রাজস্ব খাতের প্রদর্শনীতে গম চাষ করেছেন ৫ জন চাষি। ইতোমধ্যে ফলন আসতে শুরু করেছে প্রতিটি ক্ষেতে।

লক্ষ্ণীছড়ি উপজেলায় প্রথমবারের মতো প্রণোদনায় ৪টি এবং রাজস্ব খাতে একটি প্রদর্শনীতে গম চাষ করেছেন ৪ কৃষক। উপজেলার দুল্যাতলী ইউনিয়নের জারুলছড়ি গম প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক নুর হোসেন তার ৩৩ শতক জমিতে সৃজিত গম ক্ষেতে পাখির আক্রমণ ঠেকাতে জালে পুরো গম ক্ষেত ঘিরছেন।

এ সময় তিনি জানান, 'উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার দিকনির্দেশনায় এই প্রথম সবজি চাষের বদলে ক্ষেতে গম লাগিয়েছি। ফসল ভালো দেখে মনে আনন্দ লাগছে! গাছে গম পরিপক্ব হওয়ায় খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুঘু, টিয়া, চড়াই পাখি পড়ছে। ফলে ফসল টিকিয়ে রাখতে জালে ক্ষেত ঘিরতে হয়েছে।

জমির পাশে ছোট ছড়া থাকায় নিয়মিত সেচ দিতে পারছি বিধায় ফলন ভালো দেখছি।'

এ সময় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, 'নুর হোসেন একজন সফল কৃষক। তিনি এই জমিতে রবি মৌসুমে সবজি ও আউশ, আমনে ধান চাষ করতেন। এবার তার জমিতে পরীক্ষামূলক গমের প্রদর্শনী দিয়েছি। গাছে গাছে গম পরিপক্ব হয়ে উঠছে। আগামী ১৫-২০ দিন পর ফসল কাটা যাবে।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সোহরাব হোসেন ভূঁইয়া বলেন, 'এই পাহাড়ি জনপদের মাটি ও বায়ু গম চাষে বেশ উপযোগী। ফলে পরীক্ষামূলক উপজেলায় ৪ জনকে রাজস্ব খাতে এবং একজনকে প্রণোদনার আওতায় গমের প্রদর্শনী দিয়েছি। সবখানে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে সক্ষম হওয়ায় ক্ষেতে ফসলের চমক দেখছি। নির্ধারিত সময়ের ১৫ দিন পর বীজ সংগ্রহের কারণে জমিতে ফসল আসতে এবং পাকতে একটু দেরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে পাহাড়ি এই এলাকায় গম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছি।'

এদিকে মানিকছড়ি উপজেলার ২নং বাটনাতলী ইউনিয়নের বুদংপাড়া এলাকায় চলতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনার আওতায় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ২০ শতাংশ জমিতে গম চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক শামসুল হক। ইতোমধ্যে তিনি পাকা গমের ফসল কেটে ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হওয়ায় আগামী মৌসুমে বাড়াতে চান গমের চাষ।

এদিকে আমাদের চৌদ্দগ্রাম (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক। আগামী ১০-১২দিন বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে উপজেলার ১২৬ হেক্টর জমিনের ভুট্টার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তারা। এমনটাই জানিয়েছেন উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ফেলনা গ্রামের একাধিক ভুট্টা চাষি। ধানের চাইতেও অনেক কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এক সময়ের এসব ধান চাষের কৃষক ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন বলেও জানান তারা। এ ছাড়া ধান চাষে খরচ বেড়ে যাওয়া, শ্রমিকের অপ্রতুলতায় উপজেলায় ধান চাষ বাদ দিয়ে ভুট্টাসহ নানা জাতের ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তবে নতুন চাষি হিসেবে ভুট্টার এ ফলনে উপজেলা কৃষি অফিসের পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাননি বলেও অভিযোগ করেন একাধিক কৃষক।

তারা আরও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নতুন চাষি হিসেবে ভুট্টার বিপণন/বিক্রি, সঠিকভাবে ফলন ঘরে তুলতে পারা নিয়েও তারা আশঙ্কায় রয়েছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সহযোগিতা পেলে যথাসময় কৃষকরা এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন পাবেন বলে অভিজ্ঞ মহল ধারণা করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলায় ১২৬ হেক্টর জমিনে ভুট্টার চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অধিকাংশ কৃষক ধামাকা জাতের ভুট্টার আবাদ করেছেন। তথ্যমতে আরও দেখা যায়, উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ৫ হেক্টর জমিনে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ওই ইউনিয়নের ফেলনা গ্রামেই ৩.৫০ হেক্টর ভুট্টার চাষাবাদ হয়েছে।

উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ফেলনা গ্রামের কৃষক মমিনুল ইসলাম জানান, 'প্রতি বছর অন্তত ৪ একর জমিনে ধানের চাষ করি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কৃষি অফিস থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি, আমার নামও নাকি আজ পর্যন্ত কৃষক হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।'

তিনি আরও জানান, 'ধানে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং সময়মতো শ্রমিক না পাওয়ায় চলতি বছরে ৩.৫০ একর জমিনে ভুট্টার আবাদ করি। নীলফামারীর ডিমলা থেকে ৭৫০ টাকা দরে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। এখন পর্যন্ত আমার ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আলহামদুলিলস্নাহ ভুট্টার ফলন ভালো। আগামী ১০-১২ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে ভুট্টার ফলন ঘরে তুলতে পারব।'

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, 'উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনো সহযোগিতা না পেলেও পাকা ভুট্টা মাড়াইয়ে যদি কৃষি অফিসের মাধ্যমে অন্তত মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আমাদের খরচ আরও কমে আসবে।'

একই গ্রামের কৃষক ইউনুছ মজুমদার জানান, 'শখের বশে আমিও ৬০ শতাংশ জমিতে ভুট্টার চাষ করি। ফলনও ভালো হয়েছে। আগামী ১০-১২ দিন পর পাকা ভুট্টা মাড়াইয়ে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় মেশিন পেলে আমরা উপকৃত হব।'

মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বস্নক সুপারভাইজার আল আমিন জানান, 'চলতি বছরে মুন্সীরহাট ইউনিয়নে ৫ হেক্টর জমিনে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ফেলনায় ৩.৫০ হেক্টরে চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলা থেকে প্রাপ্ত ভুট্টার প্রণোদনা প্যাকেজ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু ফেলনায় কৃষকদের জন্য অন্য প্রণোদনা প্যাকেজ নেওয়ায় ভুট্টার প্রণোদনা দেওয়া যায়নি। তবে আমরা পরামর্শ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করেছি।'

উপজেলা কৃষি অফিসার জোবায়ের হোসেন জানান, চলতি অর্থবছরে উপজেলায় প্রায় দ্বিগুণ ভুট্টার আবাদ হয়েছে। মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ফেলনায় ৩.৫০ হেক্টর ভুট্টা চাষিকে ইউনিয়ন বস্নক সুপারভাইজার পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সংশ্লিষ্ট কৃষকদের ভুট্টা বিক্রিতে সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই উপজেলা কৃষি অফিস তা করবে। পাকা ভুট্টা মাড়াইয়ের জন্য চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় কোনো মেশিন নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ভুট্টা চাষি চাইলে অন্য উপজেলা থেকে মেশিন এনে মাড়াইয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে