পাঁচ ঘণ্টা পর ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
সিডিউল বিপর্যয় মঙ্গলবার সকাল থেকে ধূমকেতু এক্সপ্রেস, নীলসাগর, রংপুর এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস দেরিতে ছাড়ে। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টার পরিবর্তে বেলা সোয়া ১১টার পরে ছেড়ে যায়
প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল ও ভূঞাপুর প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশনে সদ্যনির্মিত রেললাইনে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচু্যতির প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর বগিগুলো উদ্ধার করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাত ২টার দিকে রেল প্রকল্পের ক্রেনের সহায়তায় ট্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত বগি উদ্ধারের পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে সোমবার রাত ৯টার দিকে ট্রেনের চারটি বগি লাইনচু্যত হয়। এতে উভয় পাশের বিভিন্ন স্টেশনে কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে। এদিকে ট্রেন লাইনচু্যত হওয়ার কারণ উদ্ঘাটনে পাকশী রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব (ইব্রাহিমাবাদ) স্টেশনে সোমবার রাতে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের বড়িগুলো উদ্ধারের পর মঙ্গলবার ভোর থেকে রেল চলাচল শুরু হলেও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে মারাত্মক শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে অধিকাংশ ট্রেন সকালে সময়মতো ছেড়ে যেতে পারেনি।
রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে ধূমকেতু এক্সপ্রেস, নীলসাগর, রংপুর এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস দেরিতে ছাড়ে। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টার পরিবর্তে বেলা সোয়া ১১টার পরে ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে যায়।
সূত্রমতে, সর্বশেষ ১২ ঘণ্টায় লালমণি এক্সপ্রেস ৬ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট, রংপুর ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট, কুড়িগ্রাম ৭ ঘণ্টা ৪০ মিনিট, নীলসাগর ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট, ধূমকেতু ৩ ঘণ্টা ১০ মিনিট, পদ্মা ৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিট, পঞ্চগড় ৯ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট, চিত্রা ৬ ঘণ্টা ১৫ মিনিট বিলম্বে ছেড়েছে।
বিলম্বে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রী জানান, কোথাও ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটলে কখনই শিডিউল ঠিক থাকে না। যুগের সঙ্গে সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে- শুধু রেলের সময়সূচির পরিবর্তন হয়নি। রেলের সময়সূচির আধুনিকায়ন জরুরি।
অন্যদিকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগির ৪টি চাকা লাইনচু্যতির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। আহত হন কয়েকজন যাত্রী। গতি কম থাকায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেও নতুন লাইনে ট্রেন লাইনচু্যত হওয়ায় রেললাইনের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন যাত্রীরা। সারাদিন রোজা থেকে নির্ধারিত সময় গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে চরম ভোগান্তি পড়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পাকশি রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ সূফী নুর মোহাম্মদ জানান, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচু্যত হওয়ার কারণে রেল চলাচলে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সোমবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের একটি বগির চারটি চাকা লাইনচু্যত হয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। পরে রাত ২টার দিকে ক্রেন দিয়ে বগি উদ্ধার করে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। উদ্ধারকারী ট্রেনের সহায়তায় বগিটি টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা রেলস্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। সেই সময়টা এখনো মেকআপ হয়নি। এর জেরে সকালের কিছু ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি আরও জানান, লাইনচু্যতির ঘটনা উদ্ঘাটনে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনোয়ার হোসেনকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে সাতকর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
নতুন লাইনের জন্য এ ঘটনা ঘটেছে কিনা বা কি কারণে চাকা লাইনচু্যত হয়েছে তা তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম জানান, স্টেশনের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় একটি লাইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর সিগন্যাল মেনেই ট্রেনটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু নতুন লাইন আর পুরাতন লাইনের ম্যানুয়াল রেলক্রসিং পয়েন্স (মেইনপয়েন্স) করার সময় ট্রেনের একটি বগি লাইনচু্যত হয়। লাইনে ত্রম্নটি থাকার সম্ভাবনার দাবি করেন তিনি।
দুর্ঘটনার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর আশরাফ জানান, পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রা বিরতি শেষে ঢাকার দিকে যাওয়ার সময় একটি বগির চারটি চাকা লাইনচু্যত হয়। ট্রেনের চাকায় ত্রম্নটির কারণে ওই লাইনচু্যতির ঘটনা ঘটে। পরে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে বগি অপসারণ করলে পাঁচ ঘণ্টা পর রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।