নিজের ৩৭% লিভার দিয়ে বাবাকে বাঁচালেন প্রকৌশলী ছেলে
প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বাবার প্রতি ভালোবাসা থেকেই লিখেছিলেন,পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটাও নেই। বাবা মানে বটবৃক্ষ, তিনি একাই একটি প্রতিষ্ঠান। বাবা এমন একজন ব্যক্তি, যিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে আগলে রাখেন, ছায়ার মতো পাশে থাকেন, নির্ভরতা দেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া ৩২ বছর বয়সি প্রকৌশলী সন্তান ৫৩ বছর বয়সি বাবাকে নিজের ৩৭% লিভার দিয়ে জীবন বাঁচিয়ে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের চরপিপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন (৫৩) দীর্ঘ দুই বছর ধরে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন লিভার প্রতিস্থাপন না করলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। কিন্তু চিকিৎসকদের এই সোজাসাপ্টা উত্তর মেনে নিতে পারেননি ছেলে জাকির হাসান জীবন (৩২)। যে করেই হোক বাবাকে বাঁচানোর প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। চলতি মাসের (৪ মার্চ) বাবাকে লিভার দান করার পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাবার সঙ্গে ছেলের লিভার ম্যাচও করে যায়। সেই দিনই ভারতের চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচারের পর নিজের ৩৭% লিভার দান করে বাবাকে বাঁচিয়ে তোলেন ছেলে। বর্তমানে দুজনেই সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। খুবজীপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম জানান,'প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন আমার মামা ও জাকির হাসান জীবন আমার মামাতো ভাই। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসতেছি আমার মামা একজন সাদা মাটা মানুষ। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তাকে বেলাল মাস্টার নামেই চিনে থাকে। মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের। মামার এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। ছেলে জাকির হাসান জীবনকে বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করিয়েছিলেন। সে বর্তমানে ওয়ালটন গ্রম্নপে প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত আছেন। মেয়েকেও উচ্চ শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছেন এক লেখকের সাথে। তাদের বাড়ি ঢাকায়। দীর্ঘ দুই বছর লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত থাকার কারণে আর্থিকভাবে সমস্যা দেখা দেয়। তবে মামাতো বোনের জামাই চিকিৎসা বাবদ খরচগুলো সম্পূর্ণ বহন করেছেন। কিন্তু লিভার দান করার মতো তেমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে মামাতো ভাই জীবন নিজে থেকেই লিভার দান করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। শ্রীপুর গ্রামের সমাজ সেবক আব্দুস সামাদ বলেন, 'শৈশব থেকেই জাকির হাসান জীবন অনেক ভদ্র ও মেধাবী ছেলে। বাবার প্রতি এমন ভালোবাসায় সমাজের প্রতিটি মানুষের চোখে হিরো হয়ে উঠেছে সে। সেই এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এরকম ছেলে প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্মগ্রহণ করুক।