বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

একযুগ পর স্বাধীনতার মাসে দখলমুক্ত হলো শহীদ মিনার!

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
  ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কেরানীগঞ্জে ময়লা-আবর্জনা ও অযত্নে পড়ে থাকা শহীদ মিনার -যাযাদি

বাঙালির ভাষা ও চেতনার প্রতীক শহীদ মিনার। কিন্তু চরম অনাদরে পড়ে থাকা ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের খেজুরবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শহীদ মিনারের আশপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দীর্ঘ একযুগ পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দখল থেকে শহীদ মিনার মুক্ত করায় বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মধ্যে বইছে উচ্ছ্বাস।

মঙ্গলবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে শহীদ মিনার দখলমুক্ত করে এবং ভাষা শহীদদের প্রতি জনগণ বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সম্মান, শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ন রাখতে শহীদ মিনারটির জরুরিভাবে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

এদিন সরেজমিন ঘুরে খেজুরবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, ছোট আকারের শহীদ মিনারটি অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রয়েছে। মিনার চত্বরে গড়ে তোলা অবৈধ ফল ও গরু মাংসের দোকান চোখে পড়ে। সেখানে রাখা বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা আর তার ফাঁকফোকরে পড়ে রয়েছে মানুষের মলমূত্র।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বারেক জানান, খেজুরবাগ সরকারি বিদ্যালয়টি ১৯৭৯ সালে স্থাপিত হয় এবং জমিদান করেন শিক্ষানুরাগী মৃত আলী মিয়া। খেজুরবাগ বিদ্যালয় নির্মাণের পর অনেকদিন শহীদ মিনার ছিল না। পরে স্থানীয় বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ছোট পরিসরে এ শহীদ মিনার নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে বিদ্যালয়টি পূর্বদিকে অবস্থিত। কিন্তু অযত্নে অবহেলায় বিদ্যালয় গেট ঘেঁষে মাংসের দোকান এবং মিনারের চত্বরে দখল করার ফলে দোকান বসান স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা। যা দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া চলছিল বলেও জানা যায়।

বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী দিয়ামনি জানান, 'দীর্ঘদিন ধরে খেজুরবাগ স্কুলের শহীদ মিনারের পূর্ব দিকের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে শহীদ মিনারের সামনে ও চারদিকে আটকে ফল ও শাকসবজিসহ অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। এতে শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত ছিল। উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে পুনরায় শহীদ মিনার দখলমুক্ত করায় শিক্ষার্থীরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ভাষা সম্পর্কে জানতে পারবে। শহীদ মিনার ঘিরে ফুলবাগান ও সংস্কারে অনুরোধ করছি স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি।'

এদিকে শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, তিনি জানেন না কীভাবে শহীদ মিনারের দখল গড়ে তোলা হয়েছিল। তিনি অবিলম্বে শহীদ মিনার চত্বর থেকে অবৈধ স্থাপনা ও দোকান সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।

কেরানীগঞ্জ ইকুরিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব-ইন্সপেক্টর আবুল কালাম আজাদ এ উচ্ছেদ অভিযান চালান। তিনি বলেন, 'বিদ্যালয়টি আশপাশের ও খেজুরবাগ সড়ক যানজটমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এসময় বিদ্যালয়ের প্রাচীর ঘেঁষে মাংস ও ফলের দোকান উচ্ছেদ করতেই চোখে পড়ে শহীদ মিনার। যা অবৈধভাবে দখলের বিষয়টি জানতে পেরে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শহীদ মিনার আমাদের চেতনার প্রতীক। আবারও ওই স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।'

কেরানীগঞ্জ ইউএনও আবু রিয়াদ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে নবরূপে দ্রম্নত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে