বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হলুদ সূর্যমুখীতে সেজেছে সবুজ পাহাড়

ফকিরহাটে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের
স্বদেশ ডেস্ক
  ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
রাঙামাটির লংগদুতে সূর্যমুখী ফুলের বাগান -যাযাদি

রাঙামাটির সবুজ পাহাড়ে সূর্যমুখীর হাসিতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক। এদিকে, বেশি লাভ হওয়ায় বাগেরহাটের ফকিরহাটে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখীর চাষ, আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি অঞ্চলে যখন বাড়ছে তামাকের আগ্রাসন, দিনের পর দিন কমছে খাদ্য-শস্য উৎপাদন, তখন সূর্যমুখীর চাষ নতুন সম্ভাবনা হিসেবে হাতছানি দিচ্ছে এ জনপদে। এক সময়কার প্রাচুর্যতায় ভরা পাহাড়ি জনপদের কৃষকরা অধিক মুনাফার লোভে তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু সরকারের প্রণোদনা ও প্রচারণার কারণে অনেক কৃষক তামাক চাষ থেকে মুখ ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন। ইতোমধ্যে রাঙামাটির লংগদুতে বেড়েছে ইক্ষু, কাজু, কফিসহ নানা অর্থকরী ফসলের চাষাবাদ। ফলন ভালো ও লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছে পাহাড়ের কৃষক।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটির পাহাড়ি জনপদে পরীক্ষামূলক চাষের পর এখন অনেকে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছে। আর সূর্যমুখীর আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনাসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাঙামাটির পাহাড়ি জনপদ লংগদুর কৃষি জমিতে নানা ধরনের ফসলের পাশাপাশি এখন জায়গা দখল করে নিয়েছে সূর্যমূখী ফুল। বিস্তীর্ণ জমিতে আবাদ হচ্ছে এই ফসল।

জানা গেছে, মাত্র ১০০ দিনে ঘরে তোলা যায় সূর্যমুখীর বীজ। এছাড়া অন্য ফসলের চেয়ে ভালো ও তুলনামূলক লাভও বেশি হয়। ফলে লংগদুর কৃষকরা এই ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

নতুন ফসল উৎপাদনে চাষিদের উৎসাহিত করতে নিজেই বিকল্প শস্য আবাদে মনোনিবেশ করেছেন লংগদুর কৃষক রফিকুল ইসলাম। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী এলাকায় নিজের বসতবাড়ির পাশেই করেছেন সূর্যমুখীর বাগান। প্রায় ১৮ শতক জমিতে করেছেন তার এ সূর্যমুখী চাষ।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, বাড়ির পাশেই পতিত জমিতে সূর্যমুখীর বাগান পরিচর্যা করছেন কৃষক রফিকুল ইসলাম। বাগানজুড়ে হলদে সূর্যমুখীর হাসি। প্রতিটি গাছেই ফুল এসেছে। পুরো বাগান জুড়েই হলুদ-সবুজের সমারোহ। কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় বীজ সংগ্রহ করেই গড়ে তোলেন সূর্যমুখীর বাগান।

তিনি বলেন, 'বিভিন্ন জায়গায় সূর্যমুখীর চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হই। সেই থেকেই সূর্যমুখী বাগান করার পরিকল্পনা এবং বীজ সংগ্রহ করা। তিন মাস বয়সী বাগানের প্রতিটি গাছেই ফুল এসেছে। ফুলের দানাগুলো পরিপক্ক হলেই গাছগুলো শুকিয়ে যাবে। এরপর দানা সংগ্রহ করে তা ঘানিতে ভাঙিয়ে সংগ্রহ করা হবে তেল।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রওশন জাহান বিপাশা বলেন, দিন দিন উপজেলায় সূর্যমূখীর আবাদ বাড়ছে। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রণোদনা ও নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সয়াবিন তেলের উপর নির্ভরতা কমাতে সূর্যমুখী ফুলসহ তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী বলেন, তেলের ঘাটতি পূরণে সূর্যমুখী বীজের উৎপাদন বাড়াতে এবার লংগদুতে জেলা পরিষদ ও উপজেলা কৃষি বিভাগের যৌথ প্রণোদনায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে শতাধিক কৃষককে বীজ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।

তিনি আরও জানান, প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে এবার সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হেক্টর, অর্জিত হয়েছে ২০ হেক্টর। গতবারের তুলনায় ৫ হেক্টর বেশি হয়েছে চাষ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে সূর্যমুখী চাষ উপযোগী। তবে পাহাড়ে এর আবাদ তেমন হয় না। পাহাড়ের সমতল ভূমি সূর্যমুখী চাষের জন্য বেশ সম্ভাবনাময়। তবে স্থানীয়ভাবে এর বাজার ব্যবস্থাপনা থাকলে কৃষক এটি উৎপাদন করে লাভবান হতে পারবে।

এদিকে, ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের ফকিরহাটে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখীর চাষ। অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আর স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষবাদ। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারহ। কৃষকরা ভালো ফলন আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৬১ হেক্টর জমিতে মোট ১২৪০ জন কৃষক চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। গত মৌসুমে ১৫০ হেক্টর জমিতে মোট একহাজার কৃষক এই চাষ করেছিলেন। গত বারের তুলনায় এবছর অনেক বেশি জমিতে কৃষক সূর্যমুখীর চাষ করেছেন।

মৌভোগ বস্নকের কৃষক আজাহার শেখ জানান, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় তিনি এ বছর প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। তিনি ৫০ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন। ফলনও ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি লাভবান হবেন বলে জানান।

হানিফ শেখ, মরিয়ম বেগম, জাহাঙ্গীর আলম, রেজাউল শেখ, ও রাজু শেখসহ অনেক কৃষক জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শে তারা হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় খোঁজখবর নিয়ে থাকেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপস্নব দাস ও রত্না রায় বলেন, তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় এসব কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ উন্নত মানের মাড়াই যন্ত্র, বীজ, সার দেওয়া ও সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জমিতে উৎপাদন ভালো হয়েছে। এটা অন্য ফসলের চেয়ে স্বল্প জীবনকাল ও লাভজনক। সে কারণেই সূর্যমুখী ফুল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফকিরহাটে প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপন্ন হয়। তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। সূর্যমুখীর তেল অন্য সাধারণ তেলের তুলনায় একটু আলাদা। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল অনেক বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। সূর্যমুখীর ফুল শুধু তেল উৎপাদনের জন্যই চাষ হয় না। অনেকে বাড়ির আঙ্গিনায় ও অফিসের সামনে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সূর্যমুখী ফুল চাষ করে থাকেন অনেকে। সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। কৃষকদের মাড়াই করার যন্ত্রসহ সবধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।

তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের খুলনা অঞ্চলের মনিটরিং কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমন ধান কাটার পরে এসব জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়। বিশেষ করে পতিত জমিতে কৃষকদের এর চাষ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। এ অঞ্চলে সরিষা চাষের থেকে সূর্যমুখী আবাদ ভালো হয়। কৃষকদের এবার উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ দেওয়া হয়েছে। এরআগে মাড়াই করার মেশিনের অভাবে অনেকে সূর্যমুখী চাষ করতে চাইতেন না। এখন মাড়াই যন্ত্র পেয়ে কৃষকরা আগ্রহী হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে