মেহেরপুরে রঙিন ফুলকপি ও নন্দীগ্রামে আলুতে লাভবান চাষি

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
মেহেরপুরে নিজের জমির চাষ করা রঙিন ফুলকাপি হাতে কৃষক -যাযাদি
মেহেরপুরে রঙিন ফুলকপি ও নন্দীগ্রামে আলুর বাম্পার ফলন এবং দামে চাষিদের মুখে খুশির ঝিলিক দেখা গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরে এই প্রথম কৃষি অফিসের সহযোগিতায় রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়েছে। বাহারি রঙ্গের এই ফুলকপি এলাকায় চাষিদের নজর কেড়েছে। সাদা ফুলকপির চেয়ে এই রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও সুন্দর। গতানুগতিক সাদা রঙের ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির বাজারমূল্য বেশি। ফলে লাভবান হচ্ছেন চাষি। মেহেরপুর জেলায় এই প্রথম সদর উপজেলার হিজুলী গ্রামের চাষি রইজউদ্দীন কৃষি অফিসের সহযোগিতায় নিরাপদ সবজি উৎপাদনের আওতায় ২০ শতাংশ জমিতে চাষ করেন রঙিন জাতের ফুলকপি। একটি ফুলকপির রং গোলাপি, অপরটির হলুদ। বাহারি গোলাপি রঙের ফুলকপির নাম ভ্যালেন্টিনা আর হলুদ রঙের ফুলকপির নাম ক্যারোটিনা। চাষি রইজ উদ্দীন জানান, তার ২০ শতাংশ জমিতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। যেখানে সাধারণ ফুলকপি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা সেখানে তিনি রঙিন ফুলকপি বিক্রি করছেন প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এতে সাধারণ ফুলকপির চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হচ্ছে। এই বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, প্রথমবার রইজ উদ্দীন বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। এলাকার অন্য কৃষকের মধ্যে বেশ আগ্রহ তৈরি করেছেন তিনি। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে রঙিন ফুলকপি চাষ অনেকটাই বাড়বে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, ফুলকপির জাত দুটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। রঙিন এই ফুলকপিতে আছে বিটা ক্যারোটিন, যা শরীরে ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়। আগামীতে এই রঙ্গিন ফুলকপি চাষ বৃদ্ধিতে চাষিদের উদ্বুদ্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি বলেন, বগুড়ার নন্দীগ্রামে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন ও আলুর বাজার মূল্য ভালো থাকায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। জমিতেই চড়া দাম পেয়ে খুশি তারা। গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এই উপজেলার আলু চাষিরা। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। অন্যদিকে সকাল থেকেই আলুর বস্তা প্যাকেট করে জমি থেকে সারিবদ্ধভাবে দুই চাকার সাইকেল দিয়ে রাস্তার ধারে বস্তার সারিবদ্ধ করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে একদল শ্রমিক। অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা পাওয়ায় উপজেলার অনেক শ্রমিক ঝুঁকছেন মৌসুমি এ পেশায়। আলুর দাম ও আলুর বেশ চাহিদা থাকায় ক্রেতারা চাষিদের কাছে গিয়ে জমি থেকে আলু কিনছেন ২২ থেকে ২৩ টাকা কেজি দরে। আলুর ফলন ভালো এবং দাম বেশি হওয়ায় এবার একটু বেশিই লাভের মুখ দেখছেন নন্দীগ্রাম উপজেলার আলু চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবার উপজেলায় ৩ হাজার ৩০৭ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। ৫নং ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল আলিম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্য বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তা ছাড়া শুরু থেকেই বাজারে পাকরি, রোমানা, হাগরাই, ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, এস্টোরিক্স জাতের আলুর দামও বেশ ভালো রয়েছে। ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের রিধইল গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, বিঘাপ্রতি জমিতে বীজ, শ্রমিক, সার, ওষুধ, সেচসহ আলু তুলতে আমার প্রতি বিঘায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৯০ থেকে একশ' মণ। বাজারে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১১শ' টাকা থেকে ১২শ' টাকা দরে। এতে তার বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। বস্নকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, শীতের কারণে আলু চাষে কৃষকরা শঙ্কিত থাকলেও তাদের কৃষি বিভাগ থেকে পরিমিত পরিমাণে ওষুধ স্প্রে করতে বলাসহ সব ধরনের পরামর্শ দিয়েছে। এতে করে আলুর ক্ষেত ভালো ছিল। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে আলুর চাষ বেশি হয়েছে। এ ছাড়া এবারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন এবং বাজার মূল্য ভালো রয়েছে। হাটবাজারে আলু কিনতে আসা ব্যবসায়ী রুবেল জানান, বর্তমানে আলুর জাত অনুযায়ী ১১শ' থেকে ১২শ' টাকা দামে কেনাবেচা হচ্ছে। কৃষকরা মোটামুটি ভালো দাম পাচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন, উপজেলায় এবার ৩ হাজার ৩০৭ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে এখানো মোট আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার ৫১৪ মেট্রিকটন। আবহাওয়া অনুকূল এবং আলুর বাজারমূল্য ভালো থাকায় এবার উপজেলার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।