রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১
একের ভিতরে দুই

কলেজের পিয়ন যখন প্রধান শিক্ষক!

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)
  ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কলেজের পিয়ন যখন প্রধান শিক্ষক!

একইসঙ্গে একটি কলেজের পিয়ন পদে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

একযুগ ধরে আনোয়ার হোসেন নামের ওই ব্যক্তি মেহেরপুরের গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের পিয়ন ও মানিকদিয়া কেশবনগর ভোলাডাঙ্গা (এমবিকে) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

এমবিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের প্রয়াত সভাপতি মোজাম্মেল হকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অবৈধভাবে আনোয়ার হোসেন ২০০৫ সালে নিয়োগ নেন, যা কমিটির অন্য সদস্যরা জানেন না। বিদ্যালয়টি ২০২৩ সালে এমপিও হলে সভাপতি শহিদুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে বাড়িতে বসেই ২৪ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনজন শিক্ষককে নিয়োগ দেন।

তিনি আরও জানান, খাতা-কলমে প্রধান শিক্ষক হলেও আনোয়ার বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া স্কুলে আসেন না। গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজে পিয়নের দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আছে। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে না আসায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা বোর্ড বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবর একটি আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছে। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা বোর্ড মেহেরপুর জেলা প্রশাসককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আলীম ও হুমায়ুন কবীর জানান, প্রধান শিক্ষক বছরজুড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেন। বিশেষ দিনগুলোতে তার পদধূলি পড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অফিশিয়াল কাজ তিনি বাড়িতে বসেই করেন। প্রতিষ্ঠানের খরচপত্র ও নিয়োগের বিষয়ে খোঁজ রাখেন নিয়মিত। স্থানীয়ভাবে আনোয়ার হোসেন প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ করে না।

এ বিষয়ে অভিযোগ ওঠা আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জড়িত। বিশেষ কারণে পিয়ন হিসেবে চাকরি করছেন ও নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। অফিশিয়াল কাজগুলো অনেক সময় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে, আবার কখনো বাড়িতে বসে করার কথা স্বীকার করেছেন। তবে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম জানান, 'আনোয়ার হোসেন ওই কলেজে ১৮ বছর ধরে নিয়মিত পিয়নের দায়িত্ব পালন ও বেতন উত্তোলন করছেন। আগে বিষয়টি জানা ছিল না যে, তিনি অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।'

গাংনীর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হবে।

ইউএনও প্রীতম সাহা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে