অশ্লীল ভিডিওর ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাসের দেহরক্ষী আনসার সদস্য আকাশ বিশ্বাসকে (২৭) গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ১৪ মার্চ রাতে লোহাগড়া থানার ওসি কাঞ্চন রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চাঁদাবাজির মামলায় অভিযুক্ত আকাশ বিশ্বাসকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার আকাশ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর গ্রামের মৃত নিহার বিশ্বাসের ছিলে। গত দুই বছর ধরে আনসার সদস্য আকাশ লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
জানা গেছে, লোহাগড়ার ইউএনও অনিমেষ বিশ্বাসকে অশ্লীল ভিডিওর ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে অজ্ঞাত চাঁদাবাজ চক্র। এ ঘটনায় ইউএনও'র স্ত্রী বিপাশা বিশ্বাস গত ১৩ মার্চ চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে লোহাগড়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরে ইউএনও'র ওই দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইউএনও অনিমেষ বিশ্বাসের স্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা সম্ভব হয়নি। তবে ইউএনওর দাবি, তার স্ত্রীর করা চাঁদাবাজি মামলার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
অভিযুক্ত দেহরক্ষী আকাশের ভাই সমীর বিশ্বাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, 'সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করা হোক, তাতে যদি আকাশ অপরাধ করে থাকে, তবে তার শাস্তি হোক। কিন্তু সে যদি অন্য কোনো আক্রোশের শিকার হয়, তাহলে প্রশাসন ও সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই সঠিক তদন্ত করে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।'
এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার ওসি কাঞ্চন রায় বলেন, 'একটি চাঁদাবাজি মামলায় সম্পৃক্ততার কারণে আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে জানতে পেরেছি, তিনি আনসার সদস্য ও ইউএনও'র দেহরক্ষী। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হবে।'
মামলা বিবরণে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রম্নয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি লোহাগড়া ইউএনও'র ব্যবহৃত নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে কল করে জানান, তাদের কাছে একটি অশ্লীল ভিডিও আছে, ১০ লাখ টাকা না দিলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হবে। টাকা না দিলে ইউএনও অনিমেষ বিশ্বাসকে হত্যার হুমকি দেয় চক্রটি।
অব্যাহত হুমকির মুখে ভয়ে বিপাশা বিশ্বাস স্বামীর সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তায় পর্যায়ক্রমে হুমকিদাতার ব্যাংক একাউন্টে ৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা দেন। টাকা পাঠানোর জন্য স্বামীর গাড়ি নিয়ে পৌরসভাধীন লক্ষ্ণীপাশাস্থ ব্রাক ব্যাংকের এটিএম বুথে যান। এ সময় ইউএনও'র গাড়িতে থাকা তার দেহরক্ষী আনসার সদস্য আকাশ পরামর্শ দেন, ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে ওই একাউন্টে দ্রম্নত টাকা পাঠানো যায়। তার এ কথায় আকাশকে সন্দেহ করেন ইউএনও'র স্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে তাকে সন্দেহজনকভাবে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
পরে গত ১১ মার্চ খুলনার ডুমুরিয়া থেকে ছুটি শেষে কাজে যোগদানের উদ্দেশে আকাশ লক্ষ্ণীপাশা বাসস্ট্যান্ডে নামলে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর ১২ মার্চ মামলা রুজুর মাধ্যমে পরদিন ১৩ মার্চ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আকাশকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।