দীর্ঘ ৫ বছরেও শেষ হয়নি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর ও আশুগঞ্জ উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের স্বপ্নের সড়ক নবীনগর-আশুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের নির্মাণ কাজ। তবে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ না হলেও গত তিন বছর আগে সড়কের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকটি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, ঠিকাদারের গাফিলতি এবং প্রকল্প প্রণয়ন কমিটির ভুলের কারণে দীর্ঘ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর-আশুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের নির্মাণ কাজ। এতে দিন দিন বাড়ছে স্থানীয়দের ক্ষোভ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন শিগগিরই শেষ হবে মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) পাস হওয়ার পর গত ২০১৮ সালের ১ জুলাই মেঘনা-তিতাস ও পাগলা নদীর তীর ঘেঁষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও আশুগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আঞ্চলিক সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ।
প্রকল্পের সময়সীমা অনুযায়ী গত ২০২১ সালের জুন মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও প্রকল্প প্রণয়ন কমিটির ভুলের কারণে মাঝ পথেই থমকে যায় নির্মাণ কাজ।
প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প ব্যয় মোট ৪২১ কোটি টাকা ধরা হলেও সম্প্রতি ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সড়কটির নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয় আরও ১৮৩ কোটি টাকা। এতে সর্বশেষ প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ৬০৪ কোটি টাকা।
এদিকে সড়কটি নির্মাণের আগেই ২০ কিলোমিটার পথে পাগলা ও তিতাস নদীর উপর দুটি বড় সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। তবে সড়ক নির্মাণের আগেই ৯টি মাঝারি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় সেতু ও কালভার্টগুলো জমির উপর দৃশ্যমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয়দের দাবি জনসাধারনের দুর্ভোগ লাঘবে শিগগিরই সড়কটি নির্মাণ কাজ যেন বাস্তবায়ন করা হয়।
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলার বাইশমৌজা গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, এখানে ব্রিজ আছে তবে রাস্তা নেই। মানুষ পায়ে হেঁটে কষ্ট করে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। যদি দ্রম্নত রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে এলাকাবাসীর অনেক উপকার হবে।
উপজেলার গাজীরকান্দি গ্রামের সাজন মিয়া বলেন, 'আমাদের গ্রামের ভেতর দিয়ে মোটর সাইকেল যাওয়ার রাস্তা নেই। অথচ এখানে নাকি ফোর-লেন রাস্তা হবে। রাস্তার নামে খোঁজ নেই, অনেকগুলো ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের দাবি এই রাস্তার কাজ যেন দ্রম্নত বাস্তবায়ন করা হয়। তাহলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে।'
একই গ্রামের হাজেরা বেগম নামে এক নারী বলেন, 'রাস্তা না থাকার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করতে কষ্ট হচ্ছে। রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার আগে কেন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। এই ব্রিজগুলো আমাদের কোনো কাজে আসছে না।'
এদিকে নবীনগর-আশুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের কাজের ধীরগতির জন্য সচেতন মহল প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি এবং প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির কারসাজিকেই দায়ী করেছেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর-আশুগঞ্জ নির্মানাধীন রাস্তাটির কাজ প্রায় ৫ বছর ধরে ঝুলে আছে। আমি মনে করি, যারা প্রাথমিকভাবে রাস্তার জন্য ব্যয় ধরেছেন তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। কারণ তারা তখন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমির বাজার দর না জেনেই এই ব্যয় ধরেছেন। তাই এখন প্রকল্পের কাজ যেমন দেরি হচ্ছে, সেই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয়ও দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, 'সড়কটি নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায়, আগের যে ভূমি অধিগ্রহণ করা ছিল সে জায়গা এবং যেখানে রাস্তা ছিল সেখানে কাজ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ঠিকাদার তার সময় বাড়ানোর কোনো আবেদন না করায় আমরা সেটির দরপত্র বাতিল করে দিয়েছি। আমরা পরবর্তীতে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেছি। সেটির মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পুনঃ দরপত্র আহ্বানসহ নতুন ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে দ্রম্নত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।'
উলেস্নখ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার লম্বা সড়টিতে দুইটি বড় সেতু, সাতটি মাঝারি সেতু এবং ১৩টি কালভার্ট রয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।