বছর ঘুরে আবারও আসছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মৎস্য প্রজননক্ষেত্র ঘোষিত বঙ্গবন্ধু মৎস্য হ্যারিটেজ হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ তথা রুই, কাতল, মৃগেল ও কালিবাউস মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম। ইংরেজী ও বাংলা মাস হিসেব করে এপ্রিল থেকে অমাবস্যা এবং পুর্ণিমায় এর জোঁ শুরু হয়। উৎসব শুরু হয় হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার শত শত ডিম সংগ্রহকারীর ঘরে। বছরের এ মৌসুম এলেই তারা বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব কশেন। ডিম সংগ্রহে নৌকা, বাঁশের ভোরকা, বালতি, জালসহ যাবতীয় সরঞ্জাম ক্রয়ে খরচ কত হবে। সংগ্রহ থেকে শুরু করে রেণু উৎপাদন পর্যন্ত কত টাকা লাভ হতে পারে কিংবা কত হতে পারে লোকসান। এবার কাঙ্খিত ডিম পাচ্ছেন কিনা ঠিকমত রেণু উৎপাদন পর্যন্ত তা বাঁচাতে পারছেন কিনা আর কত্ত হিসাব। হাজারও হিসেব নিকেশ শেষে অবশেষে এক বুক আশা নিয়ে ডিম সংগ্রহে প্রস্তুতি নিয়ে নেমে পড়েন তারা।
প্রতি জোঁতে রাতের পর রাত দিনের পর দিন তারা সময় কাটান নদীতে। সেখানেই চলে তাদের নাওয়া-খাওয়া। তবে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে ডিম সংগ্রহকারীর সারি।
জানা গেছে, মৌসুমের প্রারম্ভেই তথা বাংলা মাসের চৈত্র বৈশাখ থেকেই দেশের বিভিন্ন নদ-নদী থেকে ডিম দেয়ার উদ্দেশে কার্প জাতীয় মা মাছ কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদা নদীতে প্রবেশ করে। এ যেন সৃষ্টিকর্তার অপরুপ লীলা। একের পর এক মা মাছ (যা পাঁচ কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পঁচিশ ত্রিশ কেজি পর্যন্ত ওজনের) হালদায় প্রবেশ করে। এক সময় আরও বড় আকারের মা মাছ প্রবেশ করলেও সে আকার এখন নেই বললেই চলে। তবে প্রবেশে বিপত্তি ঘটে অবৈধভাবে জাল পাঁতানো মাছ শিকারিদের কারণে। যারা সুযোগ বুঝে কোপ মারে হালদায়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কখনও ঘেরা জাল, কখনও ভাসা জাল কখনও বা হাত জাল আবার কখনও সূত্রমতে বিষ প্রয়োগ করে মা মাছ নিধন করে এ মৌসুমে।
তবে গেল বছর হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা প্রশাসনের জোড়ালো অভিযানে মাছ খেকোরা কোনঠাসা ছিল। মৌসুমের শুরু থেকেই হালদা ছিল নিরাপদ। যদিও মাঝে মধ্যে মাছ খেকোরা মা মাছের আশায় রাতের আঁধারে নদীতে জাল ফেললেও প্রশাসনের অভিযানে তা ভেস্তে যেত। যা এখনও চলমান রয়েছে। চৈত্র বৈশাখ থেকেই যেহেতু মা মাছ হালদায় প্রবেশ শুরু করে এবং কর্ণফুলী নদীর ছায়ারচর হয়েই আসে সেহেতু ওই অংশটিকে যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কঠোর নজরদারীতে রেখে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখে তাহলে মা মাছে ভরে যাবে হালদা নদী। ডিম নিয়ে কারো দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারী আব্দুল জব্বার (৬৯), কামাল সওদাগর (৫৫) লোকমান (৬১), শফি (৪৩), তৈয়ব (৫৯) বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে অনেকটাই নিরাপদ হালদা। কর্ণফূলির ছায়ারচর অংশ যদি প্রশাসন একটু নজরদারিতে রাখেন তাহলে হাজারও কার্প জাতীয় মা মাছ অনায়াসে প্রবেশ করবে হালদায়।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক মায়েদুজ্জামান বলেন, মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর সুবিধার্তে সরকারি হ্যাচারীগুলো মেরামতের জন্য উপরে লিখিত আকারে পাঠানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন অভিযানও অব্যাহত রেখেছে।
ইউএনও এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, হালদার মা মাছ রক্ষায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ওই স্থানটি হাটহাজারী উপজেলার বাইরে হলেও হালদার স্বার্থে জেলা প্রশাসক এবং ওই উপজেলার ইউএনও'র সঙ্গে কথা বলে কঠোর নজরদারিতে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি হাটহাজারী অংশে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র দত্ত বলেন, মা মাছ যাতে নিরাপদে হালদায় প্রবেশ করতে পারে জেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে হালদা সংশ্লিষ্ট উপজেলার মৎস্য অফিসে সার্বক্ষণিক নজরদারীর কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছেন গেল বছরের মত এবারও হালদায় রেকর্ড পরিমাণ ডিম পাওয়া যাবে।