রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১

নীলফামারীতে ভুট্টার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম, দামে খুশি কৃষক

নারী শ্রমিকের আয় পুরুষের সমান
এস এ প্রিন্স, নীলফামারী
  ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ক্ষেতে আহরণের উপযোগী ভুট্টা -যাযাদি

নীলফামারীতে বিগত বছরগুলোর চেয়ে ভালো ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় খুশি জেলার চরাঞ্চলের ২০ হাজার কৃষক। এ বছর আগাম ভুট্টা প্রতি মণ (৪০ কেজি) এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টার দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষক উৎপাদিত ভুট্টা বিক্রি করে অপ্রত্যাশিত লাভবান হচ্ছেন।

এ বছর জেলার ৬ উপজেলায় ২৬ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে ২৮ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করা হয়েছে। নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৭৬৮ হেক্টর বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।

তবে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, এ বছর আগাম ভুট্টার কিছুটা কম ফলন পেয়েছেন। তবে ভুট্টার দাম ভালো হওয়ায় তিনি খুশি এবং অপ্রত্যাশিত লাভবান হবেন তিনি।

তিনি জানান, সেচ-সার ও কীটনাশক একর প্রতি ৩৫-৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হলেও একর প্রতি ১১০-১৪০ মণ ভুট্টা পাওয়া যায়। গতবারের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ছিল এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। সে তুলনায় এক লাখ ৩২ হাজার থেকে এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়। সেচ-সার ও কীটনাশক ব্যয় বাদ দিলেই একর প্রতি ৯৫ হাজার- এক লাখ ১৫ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। যা অন্য অর্থকারী ফসলের চেয়ে দ্বিগুণ।

একই গ্রামের বাহাদুর আলী বলেন, 'এক একরের একটু বেশি জমিতে ৪৮ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে, ফলন পেয়েছি ১০৯ মণ। ক্ষেত থেকে ছিঁড়েই এক হাজার ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি, এক লাখ ২৫ হাজার ৩৫০ টাকা পেয়েছি। সার-কীটনাশক ও সেচের খরচ বাদে শ্রমিক দিয়ে ভুট্টা ছিঁড়ানোর জন্য একর প্রতি ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।'

ভুট্টা কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিক মজিদা বেগম, আমেনা বেগম, রূপালী আক্তার ও তবিয়া বেগম বলেন, 'ভুট্টা ক্ষেতে শ্রম দিয়ে পুরুষরা যেমন অর্থ উপার্জন করেন তেমনি আমরাও করছি। দিন প্রতি ৫-৭শ' টাকা পর্যন্ত আমাদের আয় হচ্ছে। ভুট্টা এসে সবার ভাগ্য খুলে দিয়েছে। চরে আগের দুর্ভোগ নেই, সবাই সচল।'

স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, আমাদের অঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে কোনো গুদাম ঘর নেই। ব্যক্তি কেন্দ্রিক কিছু গুদাম ঘর গড়ে উঠলেও সেগুলো অন্য বড় কোম্পানির দখলে। ভুট্টা সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গুদাম হলে আরও দাম বেশি পেত মাঠের কৃষক। আব্দুল বারেক নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টার দাম বেড়েছে। দিন-দিন ফিড কোম্পানিগুলোর চাহিদাও বাড়ছে। মাসখানেক পর আরও দাম বাড়তে পারে। কিন্তু আমরা ভুট্টা মজুত করতে পারছি না। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ফিড কোম্পানিতে দিচ্ছি।'

টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন বলেন, 'অঞ্চলটিতে প্রায় ২০ বছর থেকে ভুট্টার চাষাবাদ হচ্ছে। ভুট্টা চাষের মাধ্যমে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে।'

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, এ জেলায় বেশি ভুট্টা চাষ ও ভালো ফলনের কারণ হলো এখানকার বেশিরভাগ মাটি বেলে-দোআঁশ। তাই কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের ভুট্টা চাষে পরিচর্যা এবং বীজ নির্বাচনে সহযোগিতা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ভুট্টা চাষে জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতি হয়েছে। কৃষক পরিবারগুলো দিন দিন সচ্ছলতা ফিরে পাচ্ছে। পরিত্যক্ত জমি ফেলে না রেখে কৃষকরা ভুট্টা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে