পাবনায় মাত্র এক হাজার টাকার জন্য বন্ধুর হাতে যুবক খুন

মা ও শ্যালকসহ ৩ জেলায় আরও তিন হত্যা বাঁশখালীতে হাতির আক্রমণে বৃদ্ধের ও সোনাগাজীতে গৃহবধূর রহস্যজনক

প্রকাশ | ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
পাবনায় মাত্র এক হাজার টাকার জন্য বন্ধুর হাতে এক যুবক খুন হয়েছেন। এদিকে, হবিগঞ্জের বাহুবলে দুলাভাইয়ের হাতে শ্যালক, নরসিংদীর মনোহরদীতে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে মা এবং কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে তুচ্ছ ঘটনায় এক ব্যক্তি খুন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বন্যহাতির আক্রমণে বৃদ্ধের ও নোয়াখালীর সোনাগাজীতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃতু্য হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্র্ট- পাবনা প্রতিনিধি জানান, বন্ধুর মোটর সাইকেল নিয়ে বেড়াতে যান আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাট (২৮)। মোটর সাইকেলটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে মেরামত করতে দুই হাজার টাকা খরচ হয় তার বন্ধু আজাদ হোসেনের (২২)। তার মধ্যে আজাদকে এক হাজার টাকা দেন সম্রাট। আর বাকি এক হাজার টাকা পাওনা নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। তারই এক পর্যায়ে পাওনা এক হাজার টাকা না দিয়ে বন্ধু আজাদকে হত্যা করেন সম্রাট। পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকার রাজমিস্ত্রি আজাদ হোসেন (২২) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্ত সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। রোববার সকালে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাসুদ আলম। এর আগে শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত আজাদ পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে এবং গ্রেপ্তার আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাট একইগ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় আজাদ তার মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান না পেয়ে ১২ মার্চ পাবনা সদর থানায় নিখোঁজ জিডি করেন তার পিতা আব্দুল হাকিম। জিডি নং-৮৩৫, তাং-১২/০৩/২০২৪। ১৩ মার্চ নিখোঁজ আজাদের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ দাপুনিয়া ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের মোশাররফ চেয়ারম্যানের খামারের পাশে লিচু বাগানে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুল হাকিম বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপর ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে সদর থানা ও ডিবি পুলিশের যৌথ টিম। তারা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাটকে শনিবার গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আজাদ হত্যার কথা স্বীকার করেন সম্রাট। পুলিশ সম্রাট জানান, মোটর সাইকেলের টাকা নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে সম্রাট কৌশলে গত ১১ মার্চ রাতে আজাদকে নিয়ে ওই লিচু বাগানে যান। সেখানে সম্রাট তার কাছে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে আজাদের গলায় ও চোখের নিচে আঘাত করেন। পরে তার মৃতু্য নিশ্চিত করে লাশ গাছের শুকনা লতাপাতার নিচে ঢেকে রাখেন। এ ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করে শনিবার বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন সম্রাট। পরে তাকে সদর থানার মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। হবিগঞ্জ ও বাহুবল প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার রশিদপুর চা-বাগানে ভাত খাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে দুলাভাইয়ের কুড়ালের আঘাতে শ্যালক সমরা তাঁতী (২৮) নিহত হয়েছেন। নিহত চা শ্রমিক সমরা তাঁতী ওই চা বাগানের মানিক তাঁতীর ছেলে। শনিবার রাতে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। রোববার নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবার জানায়, রাতে ভাত খাওয়া নিয়ে সমরার ভগ্নিপতি দুর্লভ চাষার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুর্লভ উত্তেজিত হয়ে কুড়াল দিয়ে সমরাকে আঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত সমরাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে বাহুবল মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আলী আকবর বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মনোহরদী (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, মনোহরদীতে ছেলের শাবলের আঘাতে হাশেনারা বেগম (৫০) নামে এ নারীর মৃতু্য হয়েছে। শনিবার বিকালে উপজেলার উত্তর আলগি এলাকায় নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় নিহতের মেয়ে ইয়াসমিন বাদী হয়ে রাতেই তার ভাই আরিফ মিয়াকে আসামি করে মনোহরদী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। নিহত হাশেনারা বেগম উপজেলার উত্তর আলগী এলাকার নূরু মিয়ার স্ত্রী। জানা যায়, আরিফ মিয়াকে দুপুরের খাবার কম দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বৃদ্ধ মা হাশেনারা বেগমকে শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করেন তিনি। আশপাশের লোকজন হাশেনারা বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ঢাকা যাওয়ার পথে হাশেনারা বেগম মারা যান। মনোহরদী থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার পর মনোহরদী থানা পুলিশ ঘাতক আরিফকে গ্রেপ্তার করেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নের আয়নারগোপ দাসপাড়া গ্রামে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় মধু চন্দ্র দাস (৫০) খুন হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার সন্ধায় আয়নারগোপ দাসপাড়া গ্রামে। প্রতিপক্ষের হামলায় পরিবারের অন্তত ৭ জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- হরিপদ দাস (৪০), সুজনা রানী দাস (৩৫), অর্মিলা রানী দাস (২৫), সঞ্জিত দাস (২৮), সুনতী রানী দাস (৩০), অজিদ দাস (৩২) ও মৃত মধু চন্দ্র দাসের স্ত্রী সুরজানা রানী দাস (৪৫)। মধু চন্দ্র দাসকে শনিবার বিকালে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে বাজিতপুর সরকারি হাসপাতালে পড়ে সন্ধায় ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে বাজিতপুর থানায় একটি অপমৃতু্য মামলা রজু হয়েছে। বাজিতপুর থানার ওসি মুর্শেদ জামান বলেন, এখনো কেউ মামলা করেনি। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বন্যহাতির আক্রমণে মো. আজগর হোসেন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ কৃষকের মৃতু্য হয়েছে। শনিবার বিকালে চাম্বল ইউনিয়নের জঙ্গল চাম্বল রইব্বার ঝিরি পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আজগর হোসেন (৬৫) পূর্ব চাম্বল খলিফা পাড়া এলাকার মৃত পুতন আলীর ছেলে। জানা যায়, চাম্বল ইউপির পূর্ব চাম্বল এলাকার আজগর হোসেন সন্ধ্যায় জঙ্গল চাম্বল পাহাড়ি এলাকায় সবজি ক্ষেত পাহারা দিতে যান। পথে বন্যহাতির পালের সামনে পড়েন। এতে হাতির পালের পায়ে পৃষ্ঠ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি জানান, ফেনীর সোনাগাজীতে ইয়াসমিন আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃতু্য হয়েছে। লাশ খাটের ওপর রেখে শিশু সন্তান নিয়ে পালিয়েছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গত শনিবার বিকালে ঘটনাটি ঘটেছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। নিহত গৃহবধূ উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামের আবু হেনা বাড়ির ফকির আহমদের ছেলে দুবাই প্রবাসী মেহেদী হাসানের স্ত্রী। ঘটনার পর থেকে নিহতের শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাসুর-ভাসুরের স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছেন। গৃহবধূর মা রোশনারা বেগমের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে শ্বশুর-শাশুড়ি এবং ভাসুর ও ভাসুরের স্ত্রী তার মেয়েকে নির্যাতন করে আসছিল। এসব নিয়ে কয়েকবার সামাজিকভাবে বৈঠকও হয়েছে। যৌতুক দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পরেও আরও যৌতুকের জন্য তার মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা। এ ব্যাপারে সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সুদ্বীপ রায় বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে সঠিক তথ্য জানা যাবে।