লংগদু স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে রোগীদের ভোগান্তি!

প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
রাঙামাটির লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে এখন দুরবস্থা বিরাজ করছে। রোগীরা পড়েছেন অসহনীয় দুর্ভোগে। নেই বিশুদ্ধ পানি, খাওয়া যাচ্ছে না হাসপাতালের দেওয়া খাবার। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে কয়েকটি ফ্যান বিকল। এছাড়াও পুরুষ ওয়ার্ডের সংস্কার কাজ দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত থাকায় চলাচলের রাস্তা, বারান্দা ও বেলকনিতে রাখা হয়েছে রোগীদের। শীত ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেই থাকছেন রোগীরা। নিজেদের বরাদ্দকৃত আসন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলছেন অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সরকারি দেওয়া সব সুবিধা, ওষুধপথ্য পাচ্ছেন না হাসপাতাল থেকে। ফলে অধিক টাকায় বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। জরুরি রোগীদের অন্য কোথাও নিতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ায় গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। যথাসময়ে ডাক্তারের উপস্থিত না থাকাসহ সব মিলিয়ে এতে অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন রোগীরা। বুধবার দুপুরে সরজমিনে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে গেলে রোগীরা এমন ভোগান্তির কথা জানান। জানা গেছে, ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবার স্থান লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতাল উন্নতি হয়েছে ৫০ শয্যায়। নতুন ভবনের কার্যক্রম শেষ হলেও উদ্বোধন হয়নি এখনো। ফলে চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন সংকটে পড়ছে রোগীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরুষ ওয়ার্ডের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে গত ৩ মাসের অধিক সময় ধরে। ফলে রোগীদের রাখা হয়েছে বারান্দা ও বেলকনিতে। তীব্র শীত ও বৈরী আবহাওয়াও রোগীরা আছেন এ দুরবস্থায়। রোগী ও স্বজনরা জানান, হাসপাতালে ডাক্তারদের অনুপস্থিতির অভিযোগ, ২-১ জনের বেশি ডাক্তারের দেখা মিলে না হাসপাতালে। ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশনের ওষুধ কিনতে হয় বাইরে থেকে। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব, অপরিচ্ছন্ন ওয়াশরুম, খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে গিয়ে দেখা যায়, মাথার ওপরে ফ্যান থাকলেও রোগীরা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। ওয়ার্ডে দেখা যায়, বিছানাগুলোতে যেসব রোগীরা আছেন তাদের অভিযোগ নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি আছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি। তিনি জনান, বুধবার রাতে তাদের দেওয়া ভাত, ডাল ও মাছের তরকারি খাওয়ার উপযুক্ত ছিল না। আরেক রোগী জানান, হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেয় তা গলা দিয়ে নামে না। তাই বাইরে থেকে খাবার কিনে খান। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১০ মাস বয়সি শিশুকে নিয়ে একদিন আগে ভর্তি হন জাহেদা। তিনি গরমে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করেও কোনোভাবেই শিশুর কান্না থামাতে পারছেন না। এদিকে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের অভিযোগ লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের পুরুষ ওয়ার্ডসহ বর্তমানে সেবার বেহাল দশা! পূর্বে এ হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা বেড থাকলেও গত কয়েকমাস ধরে সেটা আর নেই। বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও থাকতে হচ্ছে হাসপাতালের বারান্দায়। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসেও এমন দৃশ্য বেদনাদায়ক বলে মন্তব্য করেন তারা। কর্তব্যরত নার্স জানান, গত কয়েক দিন ধরে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ডায়রিয়ার ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্ধশত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। হাসপাতালের ডা. বেলাল জানান, পুরুষ ওয়ার্ডে সংস্কার কাজ চলার কারণে গত কয়েক মাস ধরে রোগীদের বাইরে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কাজ সম্পন্ন হলেই দ্রম্নত তাদের আগের স্থানে নেওয়া হবে। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের প্রধান ডা. শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন এর ব্যতিক্রম। তিনি জানান, হাসপাতালে নিয়মিত ডাক্তাররা রোগী দেখছেন এবং তারা ঠিকমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি হাসপাতালে ওষুধ মজুদ রয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে। রোগীদের খাবার উপযোগী খাদ্য সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হবে।