রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

ভেদরগঞ্জে পুকুর খননের হিড়িক, কমছে কৃষি জমি

ভেদরগঞ্জ (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
  ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে কৃষি জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে -যাযাদি

জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না- এমন সরকারি নির্দেশ থাকলেও শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা তিন ফসলি কৃষি জমিগুলোকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। এতে করে উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। এক শ্রেণির পুকুর ব্যবসায়ীরা কৃষকদের ফসলি জমিতে পুকুর খননের লোভনীয় প্রস্তাব দিচ্ছেন। উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষি জমিতে এক্সাভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে ৮ ফুট গভীর করে জমির চারদিকে বাঁধ দিয়ে পুকুর খননের এই মহোৎসব চলছে।

দিন-রাত বিরতিহীন পুকুর খনন করে সেই মাটি আবার উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় সরবারহ করা হচ্ছে। কৃষকরা না বুঝে হারাচ্ছেন তাদের উর্বর ফসলি জমি, অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন এক শ্রেণির প্রভাবশালী পুকুর ব্যবসায়ীরা।

বরিশাল, চাঁদপুর, মাদারিপুর, এমনকি রাজধানী ঢাকা থেকে এসে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সহযোগিতায় কৃষি জমিতে পুকুর খননের এই উৎসব চলছে। ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১নং খতিয়ানভূক্ত জমিও এই পুকুর দসু্যদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। শ্রেণিভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো ফসল হয়। কিন্তু কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত ধানের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় প্রতি বিঘা জমি ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদের চুক্তি করছে কৃষকরা। চুক্তির আওতায় তাদের ফসলি জমি পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে। জমির সেই মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) ৭০০ টাকায় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রয় করছে পুকুর ব্যবসায়ীরা।

উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও বিশেষ করে ছয়গাঁও, দক্ষিণ তারাবুনিয়া, চরকুমারিয়া, মহিষার, রামভদ্রপুর, আরশিনগর ইউপির বিভিন্ন স্থানে পুকুর খননের প্রবণতা বেশি। ইতোমধ্যেই শুধুমাত্র ছয়গাঁও ও দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নেই প্রায় ১০০টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে।

ছয়গাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা লিটু হাওলাদার বলেন, কিছু সংখ্যক অসাদু মাছ ব্যবসায়ী প্রশাসনের কাছে শুকনো মৌসুমে ধান চাষ এবং বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষের অনুমতি নিয়ে ফসলি জমিতে বেড়িবাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। শুকনো মৌসুমে ধান চাষ করছেন না। তাতে করে দিন দিন জমির পরিমাণ কমেই আসছে।

কৃষক জয়নাল সরদারসহ অনেকে জানান, উৎপাদনে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় করেও কাঙ্ক্ষিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই লাভের আসায় পুকুর খনন করে তুলনামূলক ঝামেলাহীন অর্থ উপর্জনের চেষ্টা করছেন। এ সব পুকুরে তারা নিজেরা মাছ চাষ করছেন, আবার কেউবা অর্থের বিনিময়ে মাছ চাষিদের কাছে লিজ দিচ্ছেন। এদিকে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বাড়ে জনদুর্ভোগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম বলেন, 'জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না'- ভূমি মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এ কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশকিছু জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি পুকুর খনন থেকে বিরত থাকার জন্য।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম বলেন, 'কোথাও আবাদি জমি কেটে পুকুর খননের কথা শুনলে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভেকুর ব্যাটারি জব্দ করি এবং কাজ বন্ধ করে দিই। পরবর্তী অনেকেই রাতের আঁধারে পুকুর খনন করছে বলে আমরা জানতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে