মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১
সেবাবঞ্চিত সাধারণ মানুষ

ফটিকছড়িতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ফটিকছড়িতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র

প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফটিকছড়ির ১৮টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভায় প্রতিষ্ঠা করা হয় ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ১০টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে সেবাপ্রত্যাশী জনগোষ্ঠীকে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন রকম সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদানের নিয়ম থাকলেও ব্যতিক্রম চিত্র চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায়।

জেলার বৃহৎ এ উপজেলায় রয়েছে ২টি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন এবং জনসংখ্যা রয়েছে ৫ লাখেরও অধিক। এসব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও মিলছে না আশানুরূপ সেবা। ফলে কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে সেবা না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে এলাকার সাধারণ লোকজনকে।

আবার দিনের পর দিন পেরিয়ে গেলেও খোলা হয় না কোনো কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কোনোটি সপ্তাহে দু-একবার খুললেও পলকেই আবার তা বন্ধ করে চলে যান সংশ্লিষ্টরা। নানা রকম অনিয়ম, চিকিৎসক না থাকাসহ পর্যাপ্ত জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।

৪, ৫ ও ৬ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ফটিকছড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, ১০টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে চলছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫০টি পদের বিপরীতে বর্তমানে পদায়িত আছেন মাত্র ১১ জন। তাদের মধ্যে ৬টিতে মেডিকেল অফিসার, একটিতে মিডওয়াইফ, একটিতে ফার্মাসিস্ট, একটি অফিস সহায়ক। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিম বলেন, ১০টি কেন্দ্রে ৫০টি পদের বিপরীতে আছেন ১১ জন। জোড়াতালি দিয়ে ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। একেক সময় একেকজন দিয়ে এগুলো খোলা হয়। নিয়মিত চিকিৎসকও থাকেন না। ২০১০ সালের পর থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ নিয়োগ বন্ধ। ফলে লোকবল সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারের উদ্যোগ আছে আউটসোর্সিং সিস্টেমে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে।

অন্যদিকে অন্য ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থাও একি। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে ৩ জন করে থাকার কথা। কিন্তু মোট ৩১ পদের মধ্যে লোকবল আছে ১১ জন। উপজেলা কোনো কোনো ইউনিয়নে এসব স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র সপ্তাহে একদিনও খোলা হয় না। সপ্তাহে কোনো দিন কোনো কোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা থাকলেও নির্দিষ্ট ডাক্তার ছাড়া অন্য কর্মচারী দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও এমওএমসিএইচ ডা. কাউসার আক্তার পপি (অতিরিক্ত) বলেন, ১০টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৩১ পদের বিপরীতে আছেন ১১ জন। চরম জনবল সংকটে মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে ডাক্তার আছেন ৬ জন। কিছু দায়িত্বরত কর্মকর্তা বা কর্মচারী তাদের নির্দিষ্ট নিয়োগস্থানে ৪ দিন সেবা দিলে অন্যগুলো দেন দুইদিন। ফলে সপ্তাহে বেশির ভাগ সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।

সরেজমিন উপজেলা সুন্দরপুর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গেলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় যুবক ওয়াশির বলেন, সপ্তাহে একদিন একজন মহিলা আসেন। তিনি কিছু ওষুধ দিয়ে চলে যান। কাউকে চিকিৎসা দেন না। ২০১৭ সালের দিকে একজন ডাক্তার এসেছিলেন। এরপর কোনো দিন আর ডাক্তার আসেননি।

একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মুজিব বলেন, ৫-৬ বছর আগে ডাক্তার এসেছিলেন। এখন মাঝেমধ্যে একজন মহিলা এসে ওষুধ দিয়ে চলে যান। স্বাস্থকেন্দ্র পর্যাপ্ত ভবন, চিকিৎসা সামগ্রী থাকলেও এখন তা কোনো কাজে আসছে না। এর ভেতর এখন কবুতরের বাসা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে