শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

শিমুল ফুলের রক্তিম আভায় সেজেছে হাওড়াঞ্চল

মন্তোষ চক্রবর্তী, হাওড়াঞ্চল (কিশোরগঞ্জ)
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে লাল রঙের ফলে ছেয়ে থাকা শিমুল গাছ -যাযাদি

কিশোরগঞ্জের হাওড় অধু্যষিত উপজেলাগুলোতে এলাকায় প্রকৃতি সেজেছে এক রঙ্গিন সাজে। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। সব কিছুর মধ্যে ও প্রকৃতিকে যেন সাজিয়েছে শিমুলে ফুলের শোভায় এক নতুন রূপে। বাতাসে দোল খাচ্ছে শিমুল ফুলের রক্তিম আভা। গাছের ডালে ফুটে থাকা শিমুল ফুলে মানুষের মনকে যেন রাঙিয়ে তুলেছে।

শিমুল গাছে বসন্তের শুরুতেই ফুল ফোটে। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। প্রাকৃতিকভাবেই শিমুল গাছ বেড়ে উঠছে।

এখন ফাগুন। বসন্তের আবহে গাছে গাছে পরিপক্ব শিমুল ফুল। গাছতলায়ও বিছানো অজস্র ফুল। কাকডাকা ভোরে গাছের তলায় তলায় ফুল আর রাস্তায় ঝরে পড়া ফুলগুলো দেখে মনে অন্য রকম এক অনুভূতি জাগে।

কিশোরগঞ্জের হাওড় অধু্যষিত উপজেলাগুলোতে বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে অষ্টগ্রামের গাঁয়ের মেঠো পথের ধরে অযত্নে-অবহেলায় শিমুল পলাশের কোলজুড়ে হেসে ওঠে রক্তিম বর্ণের ফুল। বিভিন্ন এলাকায় গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। প্রকৃতিকে যেন সাজিয়েছে শিমুল ফুলের শোভা। বসন্ত বাতাসে দোল খাচ্ছে শিমুল ফুলের রক্তিম আভা। শিমুলগাছে বসন্তের শুরুতেই ফুল ফোটে। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পাকে। পরে শুকিয়ে যাওয়া ফল ফেটে বাতাসে তুলার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা সাংস্কৃতিক ব্যক্তি রণদীর চক্রবর্তী কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওড় ঘুরে বলেন 'বসন্ত রাঙানো এই গাছগুলো এখন অনেক কমে গেছে। আগে প্রায় প্রতিটি গ্রামগঞ্জের সবখানে এই ফুলের দেখা মিলত। এখন আর সেই দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না।

এদিকে হাওড়াঞ্চলের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসরুল আনোয়ার বলেন, হাওড়াঞ্চলে এক সময় প্রাকৃতিক ভাবে শিমুল গাছ হাওড়াঞ্চলে রাঙিয়ে রাখত কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে এমনটি আর দেখা যায় না কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'এটি ফলদ বৃক্ষ নয়, শুধু ফুল আর শোভাবর্ধক। এছাড়া এই গাছের কাঠ জ্বালানি ছাড়া কোনো কাজে আসে না। ফলে এ গাছ লাগাতে মানুষের এত অনীহা।' তবে এই হাওড় এখন পর্যটন এলাকা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই হাওড়ে প্রতিদিন অসংখ্য লোকজন আসছে। তাই হাওড়ের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে এখানকার সড়কগুলোর পাশে শিমুল গাছ লাগনোর জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

অষ্টগ্রাম, ইটনা মিঠামইন উপজেলা বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামীণ মেঠো পথ ধরে চলতে গেলেই চোখে পড়ছে শিমুল গাছের লাল ফুল। এদিকে অষ্টগ্রাম উপজেলা সদর থেকে বাংগালপাড়া সড়কে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেতু থেকে নেমে একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে প্রকান্ড এক পুরনো শিমুল গাছ। দেখে মনে হবে বসন্তের স্মারক প্রকৃতি যেন নিজ রূপে সেজে উঠেছে। শিশুরা গাছতলায় সেই ফুল নিয়ে খেলা করছে।

সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকজনের যাতায়াত। আলাপ হয় বেশ কয়েক জন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে। তারা বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই পথ দিয়ে লোকজন আসা-যাওয়ার সময় একদৃষ্টিতে এই শিমুল গাছটির দিকে চেয়ে থাকেন। কখনো আবার গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছবিও তোলেন তারা। পথচারীসহ দর্শনার্থীদের মন কাড়ছে শিমুল ফুল।

হাওড়পাড়ের প্রবীণ লোকজনদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, এক সময় হাওড়ে শিমুল গাছ থেকে যে তুলা হতো সেই তুলা দিয়ে বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরি করা হতো। শিমুল গাছ কেবল সৌন্দর্যই বাড়ায় না, এই গাছে রয়েছে নানা উপকারিতা এবং অর্থনৈতিকভাবেও বেশ গুরুত্ব বহন করছে। প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন হচ্ছে শিমুল গাছ। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম বোমবাক্স সাইবা লিন। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার হয় জানা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে