গাংনীতে প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে চাষিদের সর্বনাশ

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
মেহেরপুরের গাংনীতে সরকারি প্রণোদনার বীজে আবাদ করা গাছ থেকে পেঁয়াজের গুটির বদলে মিলছে শুধুই শেকড় -যাযাদি
মেহেরপুরের গাংনীতে সরকারি প্রণোদনার পেঁয়াজ আবাদ করে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা। পেঁয়াজ চাষের যাবতীয় খরচ করে পেঁয়াজের গুটির বদলে মিলছে শুধুই শেকড়। পেঁয়াজের ঘাটতির বছরে যা দেশের জন্য বড় ধরনের দুঃসংবাদ। অমৌসুমের বীজ জেনেও কোন অদৃশ্য কারণে চাষিদের দিয়ে আবাদ করানো হলো সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি। যার খেশারত দিতে দিচ্ছে ১৫০ জন চাষিকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি প্রণোদনার আওতায় পেঁয়াজ আবাদ বৃদ্ধির জন্য চলতি মৌসুমে গাংনীতে ১৫০ প্রান্তিক চাষিকে বীজ ও সার সহায়তা দেয় কৃষি অফিস। প্রত্যেক চাষি এক বিঘা করে জমি পেঁয়াজ আবাদ করেন। সরকারি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএডিসি ভারত থেকে আমদানি করে নাসিক রেড এন ৫৩ জাতের পেঁয়াজ বীজ। যা প্রণোদন হিসেবে বিনামূল্যে এসব প্রান্তিক চাষির মধ্যে বিতরণ করে কৃষি অফিস। চাষিরা জানান, সরকারি এ বীজে ভরসা করে চাষিরা কেউ বীজ বপণ করেন, আবার কেউ চারা তৈরি করে পেঁয়াজ চারা রোপণ করেছিলেন। নভেম্বর মাসে ক্ষেতে পেঁয়াজ চারা রোপণ করলেও আজ পর্যন্ত মিলছে না পেঁয়াজের গুটি। ক্ষেতগুলোতে পুষ্ট পেঁয়াজ গাছ থাকলেও তার গোড়ায় কোন পেঁয়াজ পাচ্ছেন না চাষিরা। গুটি বাঁধবে এ আশায় চাষিরা দিনের পর দিন অপেক্ষা করে প্রয়োজনীয় সার কীটনাশকে ব্যয় করে যাচ্ছেন। কিন্তু গাছ তুললে গোড়াতে শুধু শেকড় ছাড়া কোন গুটির দেখা মিলছে না। কৃষি অফিসের কাছ থেকে কোন সদুত্তোর না পেয়ে পেঁয়াজের আশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেক কৃষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতীয় নাসিক রেড এন ৫৩ পেঁয়াজ বীজ দিয়ে মূলত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বেশ ভালো ফলন ও দাম পেয়েছেন চাষিরা। গ্রীষ্মকালীন এ জাতটি শীতকালে আবাদ করলে পেঁয়াজের গুটি হবে না এটা জানতেন কৃষি কর্মকর্তারা। কিন্তু ওপর মহলের চাপে তারা শীতকালে এ বীজ বিতরণ করেছেন। কোনো অদৃশ্য কারণে বড় কর্তারা এ জাতের বীজ আবাদে কৃষকদের বাধ্য করেছেন সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি কারও কাছ থেকে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষি সাহারবাটি গ্রামের তোহিদুল ইসলাম জানান, এক বিঘা পেঁয়াজ আবাদে তার এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকার ওপরে। পেঁয়াজ তোলার সময় পেরিয়ে গেলেও পেঁয়াজের গুটি বাধেনি। এখন ক্ষেত পরিষ্কার করতে আরও ?কিছু টাকা খরচ হবে। কৃষি অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী চাষিরা। চাষি ফখরুল ইসলামসহ কয়েকজন পেঁয়াজ চাষি জানান, সরকারি বীজ তাই ভালো ফলনের আশায় পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন তারা। কিন্তু তাদের জানা ছিল না গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ শীতকালে আবাদ করলে তাতে গুটি হবে না। ফলে পুরো আবাদের লোকসানে পড়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন এসব চাষি। পেঁয়াজ আবাদের সর্বনিম্ন আর্থিক ক্ষতি হিসেবে করলে দেখা যায়, প্রতি বিঘায় যদি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হলে ১৫০ জন চাষির খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় অর্ধকোটি টাকা। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের বড় সংকটের বছরে একদিকে যেমন পেঁয়াজ উৎপাদন কমে গেছে, অন্যদিকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন চাষিরা। যে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে কৃষি অফিসে ভুক্তভোগী চাষিরা বারবার ধর্ণা দিলেও মিলছে না কোনো আশ্বাস কিংবা প্রতিকার। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, এ জাতের পেঁয়াজ বীজ দিয়ে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে।