শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১
এমন ভয়াবহ আগুন আগে দেখেননি এলাকাবাসী

পাঁচ হাজার পরিবারের স্বপ্ন পুড়ে ছাই

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
পাঁচ হাজার পরিবারের স্বপ্ন পুড়ে ছাই

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৫ হাজার পরিবারের স্বপ্নের পানের বরজ আগুনে পুড়ে ছাই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর পানের বরজে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা এই পানের বরজকে ঘিরে স্বপ্ন বুনেছিলেন। সব হারিয়ে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ভেড়ামারার রায়টায় ৮ কি.মি. এলাকা জুড়ে ফসলি জমি, জমির ফসল, পানের বরজসহ বসত ভিটা পুড়ে ছাই হয়েছে। প্রায় কয়েক কোটি টাকার উপরে ক্ষতি সাধিত হয়েছে। গত রোববার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকা, মিটন নগর গ্রাম, আড়কান্দি গ্রাম, মাধবপুর গ্রাম, গোসাই পাড়া গ্রাম, মালিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ভেড়ামারায় এমন ভয়াবহ আগুন আগে দেখেননি এলাকাবাসী। আগুন নেভাতে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট। ৭ ঘন্টা পর রোববার সন্ধ্যার সময় ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার দুপুরে বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবনসহ তার পরিষদ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন বলেন, 'ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার ওপর। এটা এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য এক মহাবিপর্যয়। সরকার অবশ্যই কৃষকদের পাশে দাঁড়াবে। কেউ অন্যায়ভাবে আগুন লাগালে আলস্নাহ তার বিচার করবে।' ভেড়ামারার ইউএনও আকাশ কুমার কুন্ডু জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। যেসব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে সবকারি নিয়ম মেনে সহায়তা দেওয়া হবে।

বাহাদুরপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন বলেন, 'আগুন লাগতে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে হতভম্ব হয়ে পড়ি। এমন আগুন লাগা আমার বয়সে দেখিনি। মুহূর্তের মধ্যে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ৬-৭টা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। প্রায় ৮ কি.মি. এলাকা জুড়ে ফসলি জমি, জমির ফসল, পানের বরজসহ বসত ভিটা পুড়ে ছাই হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।'

ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, 'খবর পেয়ে দ্রম্নত ঘটনাস্থলে যায় ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। কিন্তু বাতাসে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে তা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ওই এলাকায় পানি নেই। আমরা আমাদের পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করেছি। প্রচন্ড বাতাস ও পানি সংকটে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। ৭ ঘন্টা পর সন্ধ্যার সময় ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।'

চুয়াডাঙ্গার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক রফিকুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আমরা নিরূপণ করতে পারিনি।

ভেড়ামারা থানার ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষি আরজ আলী জানান, 'পানবরজে হঠাৎ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটে। প্রবল বাতাসে মুহূর্তেই এই আগুন আশপাশের পানবরজে ছড়িয়ে পড়ে। আমার ৫ বিঘা পান ছিল। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই পানবরজ আমার পরিবারের আয়ের একটা উৎস ছিল। কিন্তু পুড়ে গিয়ে আমি একবারেই নিঃস্ব হয়ে গেলাম।'

ভেড়ামারা পানচাষি সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, দুই মাস পরেই বরজ থেকে পান ভাঙা শুরু হতো। চাষিরা এত বড় ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবে? কয়েকশ' চাষি ১২ বিঘা, ১০, ৫ বিঘা জমিতে পান চাষ করেছিলেন। এ ছাড়া বরজে শ্রমিকরা প্রতিদিন হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই অগ্নিকান্ডে তাদের পরিবারেও দুর্দশা নেমে এলো। সরকারের তরফ থেকে দ্রম্নত ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের জন্য সহায়তা কামনা করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে