শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো ৪শ' বছরের ঐতিহ্যবাহী 'শিব চতুর্দশীর মেলা'

লাখো পুণ্যার্থীর পদচারণা
স্বদেশ ডেস্ক
  ১১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো ৪শ' বছরের ঐতিহ্যবাহী 'শিব চতুর্দশীর মেলা'

শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিব চতুর্দশী মেলা। প্রসাশনের কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে কলিযুগের সব চেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ৩ দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শিব চতুর্দশী মেলা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা শেষ হয় রোববার। মেলা ঘিরে দেশ-বিদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীর লাখো অনুসারীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন। মেলা ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তৃতীয় আন্তর্জাতিক পীঠস্থান-খ্যাত ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়ার ঐতিহ্যবাহী শিববাড়ীতে তিন দিনব্যাপী শিব চতুর্দশী উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।। এ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী গ্রামীণ ঐতিহ্যের মেলা বসে।

গত শুক্রবার রাত থেকে ত্রাম্বকেশ্বর ভৈরবের পূজা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পূজা অর্চনা, শিব দর্শন, পুণ্যস্নানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়। শনিবার বসে বড় মেলা। এদিন সকাল থেকে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার দর্শনার্থী এই মেলায় আসেন তাদের মনবাসনা পূরণ করার জন্য। রোববার সকালে এ মেলা শেষ হয়।

আয়োজকরা জানান, ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতি বছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শিব চতুর্দশী উপলক্ষে দেশ-বিদেশের নানা বয়সের কয়েক হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী শিব দর্শন করতে আসার কারণেই এ মেলার উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পুণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।

স্বামীর মঙ্গল কামনায় দেবতা শিবকে তুষ্ট করতে গৃহবধূরা শিব অর্ঘ্য দিতে আসেন। আর অবিবাহিত মেয়েরা আসেন শিবের ন্যায় নিজের যোগ্য বর (স্বামী) প্রত্যাশায় ফুল-জলের নৈবেদ্য সাজিয়ে দেবতাকে তুষ্ট করতে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ পুরাণের বর্ণনা মতে, দক্ষরাজা যজ্ঞ করার সময় কন্যা সতীকে নিমন্ত্রণ না করায় অপমানিত সতী যজ্ঞস্থলে দেহত্যাগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিব স্ত্রী সতীর দেহ মাথায় নিয়ে প্রলয় নাচ শুরু করেন। ওই সময় যজ্ঞকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে দেবতা বিষ্ণু চক্র দিয়ে সতীর দেহ খন্ড-বিখন্ড করেন। খন্ডিত অংশগুলো যেসব স্থানে পড়ে, সেসব তীর্থস্থানে পরিণত হয়।

সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে চন্দ্রনাথ স্রাই কমিটির সহ সম্পাদক শুভ্রত চক্রবর্তী সৌমিত্র ও সদস্য কৃষ্ণ দাস বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে তীর্থ দর্শন করার আশায় তীর্থযাত্রীরা বিভিন্ন সড়ক ও আকাশ পথে সীতাকুন্ডের উদ্দেশে পূণ্য লাভের আশায় এখানে প্রতি বছর ছুটে আসেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে অনুষ্ঠিত মেলায় দেশ বিদেশের লাখ লাখ হিন্দু প্রাণ মানুষ নর-নারীর তীর্থ দর্শন করতে আগমনে সীতাকুন্ড মিলন মেলায় পরিনত হয়।

কথিত রয়েছে একজন হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষ পৃথিবীর সব তীর্থস্থান দর্শন করলেও অন্তত পক্ষে একবার যদি সীতাকুন্ড তীর্থ ভূমি দর্শন না করে তাহলে তার তীর্থ দর্শন সম্পন্ন হয় না। তাই প্রত্যেক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চেষ্টা থাকে অন্তত জীবনে একবার হলেও সীতাকুন্ডের এই মহাতীর্থ দর্শন করার। সারা বিশ্বের সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ এ কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে আসছে শুরু থেকেই। সারা দেশে এটি মেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও মূলত ধর্মপ্রাণ সনাতনীদের এটি একটি ধর্মীয় উৎসব।

চন্দ্রনাথ স্রাইন কমিটির সভাপতি শ্যামল দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ জানিয়েছেন, প্রতিবছরের মতো এবারও শিব চতুর্দশী মেলা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে। ১৫-২০ লাখ তীর্থযাত্রীর আগম ঘটেছে। ভিড়ের চাপে পড়ে এক তীর্থ যাত্রীর মৃতু্য হয়েছে। আর তেমন বড় রকমের ঘটনা ঘটেনি। শিব চতুদর্শী ও দোল পূর্ণিমা মেলা উদ্বোধন করে ছিলেন স্থানীয় সাংসদ এসএম আল মামুন।

তারা আরও জানান, প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এ মেলা। পূণ্যার্থীদের সুবিধার্থে ব্যাসকুন্ডের চারদিকে লাইটিং, পানির সু-ব্যবস্থা এবং ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন, বিশ্রামারগারসহ মহিলাদের আলাদা স্নানাগার করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় মেলার কার্যাক্রম খুব সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলা শুরু হওয়ার আগেই চন্দ্রনাথ শিব মন্দিরে এবং মন্দিরে ওঠার সিঁড়ির অনেক কাজ হয়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো বেশির ভাগই কাজ হয়েছে। মেলার পরেও চন্দ্রনাথ মন্দিরে উন্নয়নের কাজ আরম্ভ করা হবে। তবে অন্য দিনও প্রচুর পূণ্যার্থী এখানে পূণ্যস্নান, তর্পন, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরে পূজা অর্চনার মাধ্যমে পূণ্যলাভের উদ্দেশে ছুটে আসেন।

স্রাইন কমিটির উদ্যোগে বিশ্ব বৈদিক সম্মেলন, ঋষি সমাবেশ, গীতাপাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চন্দ্রনাথ ধামের মহন্ত আস্তান বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। এবিষয়ে সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিন বলেন, মেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ৬ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মেলায় ১৫টি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দিয়েছে। তাদের ডিউটি মনিটরিংয়ের জন্য ১০ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এখানে ডিউটি করেছেন। মেলাকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমরা এবং ইউএনওসহ বেশ কয়েকবার মিটিং করেছি।

এ ব্যাপারে সীতাকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, মেলা শুরুথেকে প্রচন্ড ভিড়ের চাপে পড়ে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি বৃদ্ধ তীর্থযাত্রী অসুস্থ্য হয়ে পড়ে ছিলেন। তাদের যথাসময়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সীতাকুন্ড ইউএনও রফিকুল ইসলাম বলেন, শিব চতুর্দশী মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে সবধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তীর্থযাত্রীরা নির্বিঘ্নে তীর্থ দর্শন শেষে নিরাপদে আবারও তাদের গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে