প্রীতি উরাংয়ের মৃতু্য : সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে সংশয়

প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক আয়োজিত সমাবেশের একাংশ -যাযাদি
ঢাকার মোহাম্মদপুরে বহুতল ভবন থেকে পড়ে গৃহ-সহায়ক প্রীতি উরাংয়ের মৃতু্যর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে। শনিবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক আয়োজিত সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংঘটনের বক্তারা নারীর ওপর নিপীড়ন বা অত্যাচারের ঘটনার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সমাবেশে সংসদে আদিবাসী নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বরাদ্দের দাবিও জানানো হয়। সমাবেশে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, 'আমাদের দেশে অনেক আইন হয়, সংশোধনও হয়। কিন্তু কোনো আইনের বাস্তবায়ন হয় না। আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় নারীদের ওপর প্রতিনিয়ত নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচিত্রা তীর্কি বলেন, 'পাহাড়ে ও সমতলের নারীদের ওপর যে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, রাষ্ট্র কি সেই ঘটনা দেখতে পায় না? আজ স্বাধীন দেশে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য কেন আন্দোলন করতে হবে? এই ব্যর্থ শোষক রাষ্ট্রকে আমরা আজকের এই সমাবেশ থেকে ধিক্কার জানাই।' তার ভাষ্যে, 'আমরা আমাদের আন্দোলন করে যাব, আমরা আমাদের আন্দোলন দিনকে দিন আরও জোরালো হচ্ছে। আমাদের হারানোর আর কিছু নেই, আমরা আমাদের সব কিছু হারিয়ে ফেলেছি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এখন আমাদের সময় রুখে দাঁড়াবার।' সমাবেশে আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, 'আমি মনে করি, প্রীতি উরাংয়ের মৃতু্যর রহস্য বাংলাদেশের প্রশাসন উদ্ঘাটন করতে পারবে না। কারণ একদিকে ক্ষমতা আরেক দিক দুর্বল। যাদের হাতে টাকা আছে, ক্ষমতা আছে, তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে এই রাষ্ট্রে। সেটা হোক সরকারি বাহিনী, সরকারদলীয় লোক, শিল্পপতি এবং বড় বড় সাংবাদিক হতে পারে। কারণ প্রীতি উরাং একজন চা শ্রমিকের মেয়ে।' 'তাকে হত্যা করলে কারও কিছু যায় আসে না। যদি কিছু হতো, তাহলে সারা দেশ উত্তাল হতো। আমরা সবাই দায়সারা ভাব নিয়ে একবার আন্দোলন করে স্তব্ধ হয়ে গেছি। তার মানে আমরা তাদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছি। এভাবে দিন দিন প্রশ্রয় দিতে থাকলে নিপীড়করা পার পেয়ে যাবে বলেন তিনি। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গা গ্রামের লোকেশ উরাংয়ের ১৫ বছর বয়সি মেয়ে প্রীতি গত দুই বছর ধরে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কাজ করে আসছিল। ৬ ফেব্রম্নয়ারি সকালে শাহজাহান রোডের ওই ভবনের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় 'অবহেলায় মৃতু্যর' অভিযোগে মামলা করেন প্রীতির বাবা। সেই মামলায় কারাবন্দি আছেন সৈয়দ আশফাকুল হক এবং তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার। এই দম্পতির বাসায় এর আগেও এক গৃহকর্মীর সঙ্গে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল এবং সেটির বিচার না হওয়ায় এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে মনে করেন অলিক মৃ। তিনি বলেন, 'সেই গৃহকর্মীর কী অবস্থা, রাষ্ট্র কী তা খোঁজ নিচ্ছে? আমরা যতটুকু জানি, সেও ভয়াবহ অবস্থায় আছে। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেয়নি। সেই ঘটনার বিচার না হওয়ায় আরেকটি ঘটনা ঘটাতে পারলেন সেই দম্পতি।' রাষ্ট্র অগণতান্ত্রিক হয়ে উঠেছে উলেস্নখ করে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লুনা নূর বলেন, 'দেশে যখন নূ্যনতম গণতন্ত্র না থাকে, যখন সমতার বিষয়টি না থাকে, শোষণের একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে, সেখানে নিপীড়ন চলতেই থাকে। নিপীড়ন চলে যে প্রান্তিক, তার ওপরে। সমাজ পরিচালনার সঙ্গে যারা জড়িত, রাষ্ট্র কাঠামোর সঙ্গে যারা জড়িত, যারা সুবিধাভোগী তারাই এই নিপীড়নগুলো চালায়।' সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজোয়ানা বলেন, 'বাংলাদেশের জন্ম কোনো একচ্ছত্র জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মের জন্য তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ ছিল বহুজাতীয়। বাংলাদেশের চেতনা ছিল সার্বভৌমত্ব। আজকে যখন একটি মাত্র ভাষা, ধর্ম এবং একটিমাত্র জাতি দিয়ে বুঝাবার চেষ্টা করেন, তখন আপনি কী সংবিধানকে হেয় করেন না? সে বিষয়ে আমরা কথা বলি না। তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী আমাদের বৈচিত্র্যতার অংশ। কাজে এই বৈচিত্র্যতাকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। যখন যেখানে যেভাবেই পারি, এক হয়ে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে।' সমাবেশে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সমন্বয়কারী সঞ্জয় মজুমদার, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফারহা তানজীম তিতিল, কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি উজ্জ্বল আজিম, বহ্নি শিখার প্রতিনিধি আল আমিন হোসাইন জয় প্রমুখ বক্তব্য দেন।