বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

'জিকে' সেচ প্রকল্পের তিন পাম্প বন্ধ ক্ষতিগ্রস্ত ৪ জেলার বোরো চাষি

প্রধান ক্যানেলে পানি না থাকায় ভেড়া পারাপার ও জেলেদের মাছ শিকার
ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পে পানি কমে যাওয়ায় জাল পেতে মাছ ধরা হচ্ছে -যাযাদি

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীর তীরে স্থাপন করা হয়েছে দেশের বৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প। গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের প্রধান ক্যানেলে পানি নেই। প্রধান ক্যানেলে পানি না থাকায় ভেড়াসহ সব পশু পারাপার হচ্ছে। সেচ প্রকল্পের প্রধান ক্যানেলে পানি না থাকায় জাল দিয়ে আটকিয়ে জেলেরা মাছ ধরছেন। তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটি অচল হয়ে রয়েছে প্রায় দুই বছর ধরে। বাকি পাম্পটি দিয়ে কোনো মতে সেচ কার্যক্রম চলছিল। গত ১৯ ফেব্রম্নয়ারি থেকে তৃতীয় পাম্পটিও অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) কার্যক্রম। বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়াসহ পাশের চার জেলার লাখখানেক বোরো চাষি। স্বল্পখরচের সেচ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন চারগুণ বেশি খরচ করে স্যালো মেশিনের সাহায্যে কোনোমতে ধানের জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা। কবে থেকে আবার সেচ প্রকল্পের পানি ধানের জমিতে গড়াবে তার কোনো গ্যারান্টি দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।

১৯৫৪ সালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীর তীরে স্থাপন করা হয় দেশের বৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প। কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলার প্রায় চার লাখ হেক্টর জমি এ প্রকল্পের আওতায় ছিল। পদ্মার উজানে ভারতের ফারাক্কা বাঁধ চালুর পর থেকে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ কমে আসার পর এই সেচ প্রকল্পের আওতাধীন আবাদি জমির পরিমাণ কমতে থাকে। বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রায় এক লাখ হেক্টর জমি রয়েছে। ইনটেক চ্যানেলের মাধ্যমে পদ্মা নদী থেকে পানি নিয়ে তিনটি পাম্পের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রধান খালে ফেলা হয়। শাখা-উপশাখা খালের মাধ্যমে সে পানি চলে যায় কৃষকের ক্ষেতে। ২০২২ সালে প্রকল্পের দুটি পাম্প অকেজো হয়ে পড়ে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়াসহ নানা জটিলতায় পাম্প দুটো আর চালু হয়নি। বাকি পাম্পটি দিয়ে কোনোমতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ওই পাম্পের সাহায্যে খালে সেচের পানি সরবরাহ শুরু হয়। তবে গত ১৯ ফেব্রম্নয়ারি অচল হয়ে যায় শেষ সম্বল ওই পাম্পটিও। বন্ধ হয়ে যায় সেচের পানি সরবরাহের কাজ। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন ৪ জেলার লাখখানেক কৃষক তথা বোরো চাষি। জিকে প্রকল্পের পানিতে নামমাত্র মূল্যে কৃষকরা ধানের আবাদ করে থাকেন। তবে এবার বোরো মৌসুমের শুরুতেই প্রকল্পের পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিন্তার ভাজ পড়েছে কৃষকদের কপালে। এরই মধ্যে অনেক জমিতে বোরোর চারা রোপণ করা হলেও এখনো বেশ কিছু জমিতে বাকি রয়েছে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে স্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এতে তাদের অনেক বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। আবার অনেকে পানির অভাবে এখনো চারা রোপণ করতে পারেননি বীজতলায় নষ্ট হচ্ছে ধানের চারা।

কৃষক সবুর আলী বলেন- বোরো, আমন, আউশ- এই তিনটি মৌসুমে তিনি জিকে প্রকল্পের আওতায় জমিতে ধান চাষ করেন। জিকের পানিতে নামমাত্র সেচ খরচের মাধ্যমে তিনি এতদিন ধান আবাদ করে এসেছেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রকল্পের পানি না পাওয়ায় এবার তাকে স্যালো মেশিনের সাহায্যে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে অনেক টাকা গুনতে হচ্ছে।

কৃষক হাবিব বলেন, এবার বোরো ধান চাষ করা তাদের জন্য মুশকিল হয়ে পড়বে। চড়া মূল্যে ডিজেল কিনে ধানের জমিতে সেচ দেওয়া খুব ব্যয়বহুল হবে। হাজার হাজার বোরো চাষি এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি অবিলম্বে জিকে প্রকল্পের পাম্প সচল করে সেচ কার্যক্রম চালুর দাবি জানান।

জিকে কৃষক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, 'এ বছর আমরা এখনো পানি পাইনি। কবে পানি নাগাদ পাব তাও জিকের লোকজন বলতে পারছে না। আমরা এখন স্যালো মেশিনের পানি দিয়ে ধান রোপণ করছি। ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে এক বিঘা জমি চাষ করতে অন্তত ৪০ লিটার তেল লাগবে। এ ছাড়া মেশিন ভাড়াসহ বিঘাতে কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা বেশি ব্যয় হবে। এতে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ব্যয় অনেক বাড়বে।'

ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, দুটি পাম্প আগে থেকেই নষ্ট। তৃতীয় পাম্প দিয়ে ৩১ জানুয়ারি ক্যানেলে পানি সরবরাহ শুরু হয়। কারিগরি ত্রম্নটির মুখে ১৯ ফেব্রম্নয়ারি ওই পাম্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কবে নাগাদ সেচ কার্যক্রম চালু করা যাবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। পাম্পটি সচল করার চেষ্টা চলছে।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, জিকের পানি আসতে বেশ কিছুদিন সময় লাগতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার করে ধান রোপণে কৃষকদের ব্যয় বাড়বে। তবে ধান রোপণের কিছুদিন পর পানি এলেও কিছুটা সুফল মিলবে। এতে ধান চাষের খরচ অনেক বেড়ে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে