১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীমুক্ত হয় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা। এর আগের দিন রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিটি ক্যাম্পে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধকালীন থানা বীর মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার আ. সামাদ। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮ ডিসেম্বর রাতে আক্রমণ করতে এসে দেখেন পাকিস্তানি বাহিনীর সব সৈন্য ও রাজাকাররা তাদের ক্যাম্প তৎকালীন আড়াইহাজার থানা কার্যালয় এবং ডাক বাংলোতে চাল, ডাল, অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী ও যুদ্ধের রসদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে পালিয়ে গেছে। এমনটাই জানান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাংগঠনিক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. লাল মিয়া।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. লাল মিয়া '৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর' এ সংক্রান্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা থানা কমান্ডার আ. সামাদ ও ডেপুটি কমান্ডার কাজী ওয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বে চার শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে ৯ ডিসেম্বর এলাকাকে হানাদারমুক্ত করেন। উপজেলায় দু'জন আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন। এদের একজন ছিলেন খালেকুজ্জামান মোলস্না এবং অপরজন ছিলেন তারই চাচাতো ভাই আহসানউদ্দিন মোলস্না। ইতিমধ্যেই নভেম্বরে ইদবারদী গ্রামের তরুণ ও তুখোড় মুক্তিযোদ্ধা ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র কাজী মঞ্জুর হোসেন উপজেলার বগাদী এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। ৮ ডিসেম্বর থানা কমান্ডার আ. সামাদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সর্বশেষ অবস্থান আড়াইহাজার থানা কার্যালয় এবং ডাকবাংলোয় আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। ওইদিন রাত ৮টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ওই দু'টি ক্যাম্পে আক্রমণ করতে এসে দেখতে পান ক্যাম্পগুলোতে থাকা প্রায় অর্ধশতাধিক পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকার তাদের খাদ্য সামগ্রী এবং যুদ্ধের রসদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। এরপর ৯ ডিসেম্বর সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকার জনতা মিলে ওই ক্যাম্পগুলোতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং আনন্দ উলস্নাসে মেতে ওঠেন।