বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাঘের রোগ নির্ণয়ে সুন্দরবনে গবেষণা কার্যক্রম শুরু

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
  ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বাঘের রোগ নির্ণয়ে সুন্দরবনে গবেষণা কার্যক্রম শুরু

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণে নিয়মিত গবেষণা হয়। তবে এবার প্রথম বারের মতো শুরু হয়েছে বাঘ ও বাঘের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত প্রাণীর রোগ নির্ণয়ের গবেষণা। সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জের আওতাধীন ৬৫টি গবেষণা পয়েন্ট থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন গবেষকরা। গবেষণাটি করা হচ্ছে সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায়।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বনভূমি ৪ হাজার ৮৩২ এবং জলাভূমি ১ হাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটার। ১৯৯৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই বনভূমির স্থলে ২৮৯ প্রজাতির প্রাণীর বসবাস। এ ছাড়া ২১৯ প্রজাতির জলজপ্রাণী বাস করে। ২০১৫ সালের বাঘ শুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টি। আর ২০১৮ সালের শুমারিতে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪। ফলে বাঘ বা বাঘের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হরিণ, বানর, শূকর কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কি না, সে ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যাবে। আর যদি আক্রান্ত থাকে, তাহলে কি করলে এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারবে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত।

জানা গেছে, গবেষণার জন্য নমুনা হিসেবে বাঘের মল, লোম, হাড় এবং হরিণ, বানর ও শূকরের দেহের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া বনের কাছাকাছি লোকালয়ের কুকুর ও বিড়ালের রক্ত নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হবে। বাঘ, হরিণ, বানর ও শূকরের যে ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে, লোকালয়ের প্রাণীরও সে ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে কি না, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন গবেষকরা। পাশাপাশি বাঘের জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়েও গবেষণা করবেন তারা।

এর আগে সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রল্পের আওতায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে বনে বাঘ গণনা কার্যক্রম শুরু হয়। ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের (ফাঁদ) মাধ্যমে ওই কাজ চলছে। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শেষ হয়। ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, ওই দুই রেঞ্জে বাঘের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে খুলনা রেঞ্জে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে করা জরিপে বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বললেই চলে। সে তুলনায় এবার খুলনা রেঞ্জে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিছু স্থানে বড় বাঘের সঙ্গে বাচ্চার ছবিও ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বলে দাবি তাদের। ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এখনো কাজ শেষ হয়নি। চারটি রেঞ্জ থেকে পাওয়া বাঘের তথ্য বিশ্লেষণ করে চলতি বছর বাঘ জরিপের তথ্য প্রকাশ করবে বন বিভাগ।

গবেষণা দলের প্রধান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সুলতান আহমেদ বলেন, গত ৭ মার্চ থেকে নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ দিন ধরে সুন্দরবনের ৬৫টি গবেষণা পয়েন্ট থেকে ২৫০টির মতো নমুনা সংগ্রহ করা হবে। পরে সেই নমুনা একেক গবেষক একেকভাবে বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করবেন। আগামী এক বছর পর সেই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।

সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে বাঘ ও বাঘের খাদ্যের রোগ নির্ণয়। সেই গবেষণা কাজই শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের গবেষণা এই প্রথম। গবেষণাটি বাঘের ভবিষ্যৎ বংশবৃদ্ধিতে এবং টিকে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বনের মধ্যে যে বাঘ মারা যাচ্ছে এবং তা কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, নাকি অন্য কোনো কারণে মারা যাচ্ছে- এই গবেষণা থেকে তা জানা যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে