জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না' এমন সরকারি নির্দেশ থাকলেও শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা তিন ফসলি কৃষি জমিগুলোকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। এতে উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষিজমির পরিমাণ। এক শ্রেণির পুকুর ব্যবসায়ীরা কৃষকদের ফসলিজমিতে পুকুর খননের লোভনীয় প্রস্তাব দিচ্ছেন।
উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষিজমিতে এক্সাভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে ৮ ফুট গভীর করে জমির চারদিকে বাঁধ দিয়ে পুকুর খননের এই মহোৎসব চলছে।
দিন-রাত বিরতিহীন পুকুর খনন করে সেই মাটি আবার উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় সরবারহ করা হচ্ছে। কৃষকরা না বুঝে হারাচ্ছেন তাদের উর্বর ফসলিজমি, অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন এক শ্রেণির প্রভাবশালী পুকুর ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। শ্রেণিভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো ধরনের ফসল হয়। কিন্তু কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং উৎপাদিত ধানের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় প্রতি বিঘা জমি ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদের চুক্তি করছে কৃষকরা। চুক্তির আওতায় তাদের ফসলিজমি পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে। জমির সেই মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) ৭০০ টাকায় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রয় করছে পুকুর ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও বিশেষ করে ছয়গাঁও, দক্ষিণ তারাবুনিয়া, চরকুমারিয়া, মহিষার, রামভদ্রপুর, আরশিনগর ইউপির বিভিন্ন স্থানে পুকুর খননের প্রবণতা বেশি। ইতোমধ্যে শুধু ছয়গাঁও ও দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নেই প্রায় ১০০টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে।
ছয়গাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা লিটু হাওলাদার বলেন, 'কিছুসংখ্যক অসাধু মাছ ব্যবসায়ী প্রশাসনের কাছে শুকনো মৌসুমে ধান চাষ এবং বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষের অনুমতি নিয়ে ফসলি জমিতে বেড়িবাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। শুকনো মৌসুমে ধান চাষ করছে না। তাতে করে দিন দিন জমির পরিমাণ কমেই আসছে।'
কৃষক জয়নাল সরদার সহ অনেকে জানান, 'উৎপাদনে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় করেও কাঙ্ক্ষিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই লাভের আসায় পুকুর খনন করে তুলনামূলক ঝামেলাহীন অর্থ উপর্জনের চেষ্টা করছেন।'
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম বলেন, 'জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না'- ভূমি মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ফসলিজমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এ কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশকিছু জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম বলেন, 'কোথাও আবাদি জমি কেটে পুকুর খননের কথা শুনলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা স্থলে গিয়ে ভেকুর ব্যাটারি জব্দ করি এবং কাজ বন্ধ করে দেই।'