বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে শুষ্ক মৌসুম এলেই যমুনায় পানি কমে যাওয়া এক চিরাচরিত নিয়ম। চর জেগে ওঠে নদীর বুক চিরে। কোথাও কোথাও পানি নেমে যায় হাঁটুর নিচে আবার কোথাও একেবারেই পানি থাকে না। যমুনা পাড়ি দেওয়া যায় হেঁটেই। নদী শাসন ও যত্রতত্র থেকে ভূমিখেকোদের বালু উত্তোলনের কারণে নৌচলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে। সেইসঙ্গে যমুনা পাড়ের মানুষের দুর্ভোগেরও যেন অন্ত নেই। চরাঞ্চলের লোকজনের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের হেঁটে চলাচল করতে হয়। এদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ যমুনা নদীর কালীতলা ঘাট থেকে শ্যালো মেশিনচালিত নৌকায় জামালপুর ও খেয়া নৌকায় বাগবের, গজারিয়া, চরবাটিয়া, শালুখা কুড়িপাড়া, পাখিমারাসহ বিভিন্ন চরে যাতায়াত করেন। কিন্তু যমুনা নদীতে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় ঘাটের দক্ষিণে চর জেগে উঠেছে। নদীর বুকেই হচ্ছে চাষাবাদ। নদীর মাঝখানে এখন সরু খালের মতো। কোথাও হাঁটুপানি, হেঁটেই পার হওয়া যায় এপার থেকে ওপার। নদীর তীরে পড়ে আছে নৌকা। এছাড়া লোকজন হাঁটুপানি ভেঙে নদী পারাপার হচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন সময় অপচয় হচ্ছে, তেমনি বাড়তি ভাড়া দিয়ে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে।
ওই এলাকার শত শত কৃষক, তাদের উৎপাদিত ফসল- বেগুন, মরিচ, আলু, লাউ, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজি হেঁটে সারিয়াকান্দি বাজারে না নিয়ে আসতে পেরে উৎপাদিত ফসল নষ্ট হচ্ছে। আবার কিছু নৌকা চলাচল করলেও তা গন্তব্যে যেতে দ্বিগুণ সময় লাগছে। এতে একদিকে যেমন সময় অপচয় হচ্ছে, তেমনি বাড়তি ভাড়া দিয়ে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে। কৃষিপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহণে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে।
কাজলা বাওইটোনা চরের আব্দুল হান্নান বলেন, 'আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি আবারও জেগে উঠেছে। সেখানে আমরা নানা ধরনের ফসল ফলাচ্ছি। তবে ফসলগুলো বাড়িতে নিয়ে আসতে অনেক টাকা ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া দিতে হয়।'
পারতিত পরল খেয়াঘাটের মাঝি আলতাফ আলী বলেন, 'যমুনা নদীতে বিশালাকার চর জেগে ওঠায় এবং নদীতে পানি না থাকায় গত কয়েকদিন ধরেই নৌঘাটটি বন্ধ রয়েছে। কালিতলা খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি আমিরুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীতে নৌকা চালানো এখন খুবই কষ্টকর। নৌকা মাঝেমাধ্যেই বালুচরে আটকে যায়। আটকা পড়া নৌকা বালুচর থেকে নামানো খুবই কষ্টকর। তাছাড়া নদীতে পানি না থাকায় অনেক পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হয়।'
কালীতলা ঘাটের ইজারাদার আবু সাইদ বলেন, 'যমুনা নদীর নাব্য সংকটের কারণে নদীপথে নৌকা নিয়ে যেতে অনেক সময় লাগছে। মাঝেমধ্যে নৌকা বালুতে আটকে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগেই জামালপুর যাওয়ার নৌরুটে নিজ খরচে ড্রেজিং করা হয়েছে। ড্রেজিং করার কারণে কয়েকদিন ভালোভাবে চলা গেলেও পরে আবার বালু জমে একই অবস্থা হয়।'
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, প্রতিবছর উজান থেকে এসে পলি জমে। এতে নদীর বুকে চর জেগে ওঠে। নদীর পানিপ্রবাহ ও তীর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সমীক্ষা চলমান রয়েছে, যা সম্পন্ন হলে নদী ড্রেজিং প্রকল্প গ্রহণ ও দ্রম্নত বাস্তবায়ন করা হবে।