সর্বশেষ ষষ্ঠ জনশুমারি তথ্য অনুযায়ী দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। দেশের বিশাল অংশ নারী আর তাদের উন্নয়ন জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নারী ও শিশুদের বিকাশের জন্য সময় উপযোগী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ অর্জনে নারীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ অন্যতম প্রধান চালক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মূল ধারার আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে নারীদের সমান ও সক্রিয় অংশগ্রহণে ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নারীদের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নিরোলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সরকারের নারী ক্ষমতায়নে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে মাঠপর্যায়ে প্রশাসন ক্যাডারে নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। নারী ক্ষমতায়নে রাজশাহী জেলার সীমান্তবর্তী চারঘাট উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত নারীদের অংশগ্রহণ একটি অন্যতম উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বর্তমানে উপজেলায় প্রশাসনিক প্রায় ৩৩টি দপ্তরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদসহ অধিকাংশ পদে নারী কর্মকর্তারা সাফল্যের সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন।
গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মানজুরা মুশাররফ, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার খালেদা সুলতানা, একটি বাড়ি একটি খামার কর্মকর্তা লাইলা আরজুমান বানু, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রাশেদা পারভীন, আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা নাজমা খাতুন, সহকারী শিক্ষা অফিসার নাহিদা আক্তার, তথ্য কেন্দ্র কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন অন্যতম। এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নারীরা বেশ সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
তৃণমূলে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র উপজেলায় শীর্ষ পদে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সাইদা খানম প্রায় ছয় মাস যাবৎ চারঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলায় স্বল্প সময় হলেও গতানুগতিক কাজের বাইরে স্কুলগুলোতে শিক্ষার ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতা নিয়ে আসতে কাজ করছেন যা স্থানীয় সাধারণ মানুষ দারুণভাবে গ্রহণ করছে।
অনুরূপভাবে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মানজুরা মুশাররফ স্বচ্ছ ও জনমান্ধব ভূমিসেবা নিশ্চিতকরণে গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে ছিলেন তৎপর। উপজেলা ভূমি অফিসের শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়নসহ অনলাইনে ভূমি উন্নয়নকর পরিশোধ ই-সেবায় ভূমি অফিসের সেবার চিত্র পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এমনিভাবেই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে কাজ করছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মরত সব নারী কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক নারী কর্মকর্তা থাকায় নারীদের সামাজিক সুরক্ষা এবং সামাজিক ক্ষমতায়ন হচ্ছে বলে মনে করেন নারীপক্ষের সভানেত্রী ও থানাপাড়া সোয়ালোজর সহকারী পরিচালক মাহমুদা বেগম গিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম বলেন, নারীরা সমানতালে কাজ করে দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নারী ক্ষমতায়নে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উঠান বৈঠক, উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে নারীরা যেন স্বাবলম্বী হন। দেশ পরিচালনা, শিক্ষা, খেলাধুলাসহ সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজ নারীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর বজায় রাখছেন এবং নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।